শিকলে বন্দী জীবন, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট
১০৩

শিকলে বন্দী জীবন, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ,
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধিঃ
লোহার চাকতি লাগানো শিকল দুই পায়ে পরানো হয়েছে। আর সেই শিকলে লাগানো হয়েছে ২টি বড় তালা। দিনে বাড়ির সুপারি গাছের সাথে আর রাতে ঘরে চৌকির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ১২ ফুটের শিকলে এক যুগের বেশি সময় ধরে বাঁধা মানসিক প্রতিবন্ধী লিটনের (৩৭) জীবন।

- Advertisement -

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরআমখাওয়া ইউনিয়নের আকন্দ পাড়া গ্রামের মোঃ সিরাজুল ইসলামের ছেলে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির পাশে একটি সুপারি গাছের সঙ্গে শিকলবন্দি অবস্থায় বেধেঁ রাখা হয় লিটনকে। মাঝে মাঝে নজরদারিতে রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়া হলে স্থানীয় বাজারে ঘোরাঘুরি করে সে। অধিকাংশ সময় থাকে চুপচাপ। কেউ কাছে গেলে কোন কথাই বলে না।

লিটনের বৃদ্ধ বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, দুই ছেলের মধ্যে লিটন ছোট।

জন্মের পর থেকে বছর বিশ পর্যন্ত সে ভালো ছিলো। সানন্দবাড়ী বাজারে বাবার চাউলের দোকান দেখবাল করতো।
কিন্তু
কিছুদিন পর হঠাৎ পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে লিটন । স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক ও কবিরাজ দিয়ে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সুস্থ হয়নি। সুযোগ পেলেই এদিক-সেদিক চলে যায়। এজন্য বাধ্য হয়ে পায়ে শিকল পরিয়ে আটকে রাখা হয় তাকে।

লিটনের মা জানান, ওর বাবা ৫ বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, ফলে সংসারের উপার্জন করার মতো কেও থাকেনা । অভাবের সংসারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উর্পাজনের উৎস। অসুস্থতার পর মানুষের সহযোগিতায় কোন মতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। লিটনকে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছি। মায়ের হাতে ছাড়া খাবার খায় না সে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ্ আলম বলেন, তার কোন ভাতার কার্ড নাই।
তবে কোন সহায়তা আসলে তাকে দেওয়া হয়।

সানন্দবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক আলহাজ্ব কবি আজিজুর রহমান বলেন, লিটন ও তার মা-বাবা একসঙ্গে থাকে। তারা অসহায় হতদরিদ্র পরিবার । অর্থের অভাবে কবিরাজি তাবিজ বা ঝাড়ফুক ছাড়া লিটনের ভাগ্যে জোটে নিয়ে কোন ডাক্তারে পরামর্শ বা ঔষধ। দেশের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে হয়তো লিটন আবার ফিরে পেতে পারে তার পূর্বের জীবন।

লিটনের মা বলেন, আমরা এখন অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছি। কারও আর্থিক সহায়তায় উন্নত চিকিৎসা পেলে লিটন সুস্থ হয়ে উঠবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার শেফা বলেন, লিটন শিকলবন্দি কথা এ কথা জানা নেই। তার পরিবার যোগাযোগ করলে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সে যদি প্রতিবন্ধী হয়ে থাকে তাহলে তার প্রতিবন্ধীর কার্ড তৈরি করে দেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও সংবাদ