আমরণ অনশনে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী

ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট
১২

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ

“বিচারে কেন এত বিলম্ব?” “অভিযুক্তকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে”,এমন দাবি নিয়ে আমরণ অনশনে বসেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(বশেমুরবিপ্রবি)কৃষি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্জয় দাসআগামীকালকের মধ্যে অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লাকে আজীবন বহিষ্কার করা না হলে দপ্তরে দপ্তরে ঝুলবে তালা।

বুধবার (৫জুন) বিকেল ৫ঘটিকায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেছে সঞ্জয়। অনশনে বসার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের দু’তলায় রেজিস্ট্রার কক্ষে তালা মারে সঞ্জয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সঞ্জয় দাস বলেন,আমি অন্যায়ভাবে মারাত্মক জখম এর স্বীকার হয়ে চোখ হারাতে বসেছিলাম। হামলাকারী মাসুদ মোল্লার স্থায়ী বহিষ্কার না দেওয়া পর্যন্ত আমি আমরণ অনশন করে যাবো।

Oplus_131072

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪মে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিনশেড এলাকায় অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লার সাথে মারামারির ঘটনা ঘটে।

- Advertisement -

শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বিদ্যুৎ ছিলোনা। পরেরদিন সঞ্জয়ের পরীক্ষা ছিলো। তীব্র গরমে গ্রন্থাগার থেকে বেরিয়ে আসে সঞ্জয়। এরপর টিনশেডে গিয়ে পড়তে বসে। পাশেই বান্ধবীর সাথে আড্ডায় মর্ত্য ছিলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাসুদ মোল্লা। অট্টহাসিতে মর্ত্য ছিলো মাসুদ এবং তার বান্ধবী। তাদের হাসির কারনে বিরক্তিবোধ করেন সঞ্জয়। এসময় সঞ্জয় মাসুদ মোল্লাকে ধীরে ধীরে কথা বলার অনুরোধ জানান। সঞ্জয়ের কথার শোনে রেগে উঠেন মাসুদ। অতঃপর সঞ্জয়কে আঘাত করতে থাকেন। আঘাতের এক পর্যায়ে সঞ্জয়ের ডান চোঁখের উপরের অংশ ফেটে যায়।

এসময় সঞ্জয়ের পাশে বসে ছিলেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ২০১৮-১৯শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল হাসান আকাশ। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট মোতাবেক আকাশ বলেন, সেদিন সঞ্জয় তাদের ধীরে ধীরে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু মাসুদ মোল্লা সঞ্জয়ের কথায় সাথে সাথে উত্তেজিত হয়ে যায়। এবং সঞ্জয়কে আঘাত করতে থাকে। এখানে সঞ্জয়ের কোনো দোষ ছিলোনা বলে রিপোর্টের দাবি করেন আকাশ। আকাশ বলেন, সঞ্জয়ের এই অবস্থা দেখে তাকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাই। কিন্তু রক্ত বন্ধ হচ্ছিলোনা। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে দ্রুত গোপালগঞ্জ ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তার তার কপালে ৫টি সেলাই দিয়েছে।

অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লার সাথে কথা বলে জানা যায়, সেদিন সঞ্জয় তার সাথে বেয়াদবি করে। তাই রাগের মাথায় মাসুদ তার উপর চড়ে বসে। দস্তাদস্তির এক পর্যায়ে সঞ্জয়ের চোঁখের উপরে আঘাত লেগে যায়।

দায় এড়িয়ে মাসুদ বলেন, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে সঞ্জয়কে আঘাত করিনি। এটি একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিলো। একই ঘটনা আমার সাথে ঘটতে পারতো।

ঘটনার দিন বিকেলে সঞ্জয় গোপালগঞ্জ সদর থানায় মাসুদের বিরুদ্ধে সাধারন ডায়েরি করে। একই দিন সন্ধ্যায় বিচারের দাবি জানিয়ে প্রক্টর বরাবর আবেদন করে সঞ্জয়। আবেদন সঞ্জয় দাবি করে, মাসুদ তাকে ইট দিয়ে আঘাত করেছে। তৎক্ষনাৎ সঞ্জয় অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর তার আর কিছু মনে ছিলোনা।

পরেরদিন ১৫মে অভিযুক্ত মাসুদ সাময়িক দোষ স্বীকার করে প্রক্টর বরাবর আবেদন জানায়।

ঘটনার দু’দিন পর রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এবং একাডেমিক সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু ২জুন থেকে মাসুদের মাস্টার্সের মিডটার্ম পরীক্ষা শুরু হয়। মাসুদ পরীক্ষায় যথারীতি অংশগ্রহন করে।

এসময় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. আনিসুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বহিষ্কার হওয়া কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে বসতে পারে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমিতো জানি তাকে বহিষ্কার করে দিয়েছে। কিন্তু সে কিভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে?

প্রক্টর সূত্রে জানা যায়, মাসুদের বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তি বিভাগে পাঠান নি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান। তাই বিভাগীয় পরীক্ষায় মাসুদ উপস্থিত হয়েছে।

মাসুদ কেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে? এবং বিভাগে কেন বহিষ্কার নোটিশ যায়নি? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে যোগাযোগ করা হয় রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমানের সাথে। একাধিকবার তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মারামারির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ২২দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও কমিটির রিপোর্ট জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি।

এবিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় তদন্ত কমিটির সাধারন সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সেলের প্রধান সাজিদুল হকের সাথে। সাজিদুল হক বলেন, গত কয়েকদিন যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে গেছে। প্রতিটি বিষয় খুবই জটিল। একসাথে এতগুলো বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে আমাদেরকেও হিসমিস খেতে হচ্ছে। আগামীকালকের মধ্যে আমরা আমাদের রিপোর্টটি জমা দিবো।

এই বিভাগের আরও সংবাদ