কবিতা “আজ চৈত্রের শেষ দিন”

ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট
৩৩

“আজ চৈত্রের শেষ দিন”
~~মোঃ ইউসুফ

আজ চৈত্রের শেষ দিন,
এই পড়ন্ত অপরাহ্নে বসে আছি
আমি একা নিরালায় নিরাশ্বাস।
চৈত্রের রোদ্দুর সঙ্গে প্রবল উষ্ণতায় চারিদিক
হাহাকার,নিরম্বু আর প্রচন্ড তৃষ্ণায় ধুঁকছে প্রাণিকুল।

- Advertisement -

আজ চৈত্রের শেষ দিন, প্রকৃতি দেখো দিছে তার তীব্র
তাপমাত্রায়, প্রকৃতি যেনো নিরাহার, নিরানন্দ, রুগ্ন –
অবসন্ন, কারো প্রতীক্ষায় উদগ্রীব!
কেনো আজ তুমি এত উদাসীন?
জানা নেই মোর সেই নিদান।

যতই তুমি হে প্রকৃতি, নিয়ত নিরবকাশ ; তাইতো তুমি
দিয়েছো দেখা চৈত্রের শেষ পড়ন্ত বিকাল, বছর শেষে
এমতাবস্থায় কেহ চায় প্রজ্বলন্ত যৌবনকে শান্ত করার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা, কেহ চায় মিলনের সুখময় ক্রিয়া।

আজ চৈত্রের শেষ দিন এই পড়ন্ত বিকালে প্রকৃতির
রুক্ষমূর্তি উপেক্ষা করে, বাঙালি জেগেছে আজ উৎসব -পার্বণের বিচিত্রতর মহিমায়, ‘হাড়ি’,’বাউড়ি’,’ডোম’,’মুচি’ বাঙালি নিম্নবর্ণ মেতেছে আজ “গাজন” উৎসবে।

‘দেব’ সেবার অধিকার পেয়েছে আজ তারা, খুশিতে তাই হয়েছে মাতোয়ারা, পরিধেয় গেরুয়া ও লাল থান সন্ধ্যায় হবিষ্যান্ন খান। সনাতনীরা শাস্ত্র মতে মেতেছে আজ স্নান,দান,ব্রত,উপবাস ও নানাবিধ ধর্মীয় পূজা-অর্চনায়।

সূর্য আজ রুদ্ররূপে প্রতিভাত, সূর্যের কৃপা করছে তাই আজ দরিদ্র উদ্বিগ্ন কৃষককুল, বাঁচার তাগিদে তুলছে দু’ হাত সমীপে দয়াময় ঈশ্বর রক্ষিতে গ্রীষ্মের দাবদাহ উষ্ণতায়,তুষ্টিতে ‘সূর্য দেবতা’ নৈবেদ্য দিয়ে করছে পূজা অনিবার।

আজ চৈত্রের শেষ দিন, এই পড়ন্ত বিকালে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও মেতেছে বিদায়ী আনন্দ-বাজনায়,ধুয়ে- মুছে
সব করছে পরিষ্কার বিসর্জিতে বিগত জঞ্জাল ; খুলিবে কাল নতুন হিসাব, কষাকষি করছে তাই আজ পুরাতন হিসাব।

ধূপ,ধূম্র,ধুনো সুগন্ধিভারি জ্বালায়, নির্মল করতে বিপণী, অশুভ – অশুচি দূরীভূত লাগি ছিটায় গোলাপ – পানি; আজ এই পড়ন্ত বিকালে গ্রাম্য – মেলা বসেছে নানা জায়গায়, যুবতীরা তাই ছুটছে মেলায় চুরি- ফিতা কিনিবার ইচ্ছায়।

ছোট্ট ছোট্ট শিশু তাঁরাও ছুটছে মেলায় ” চরকি ” দেখিবার;আজ চৈত্রের শেষ দিন,লোকাচারে বিশ্বাসী রমণীরা তাই রাখছে ব্রত স্বামী, সংসার, কৃষি ও ব্যবসার মঙ্গল কামনায়, মাটির ঘর লেপন করে করছে দীপ্তি ও চাকচিক্যময়।

অনেকে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে আজ নববর্ষকে নতুন রুপে বরণ করবার মঙ্গল ভাবনায়; কেউবা ছুটছে শহরে লাল, -সাদা কাপড় কেনার তাড়নায় ; কেউ কেউ বাজারে কিনতে যাচ্ছে পদ্মার ইলিশ, পান্তা – ইলিশ খাওয়ার লোভনীয় ইচ্ছায়।

লেখক:মোঃ ইউসুফ
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,গোপালগঞ্জ -৮১০০

এই বিভাগের আরও সংবাদ