নীতীশ এর কবিতা “পল্লী মায়ের ফোন”
পল্লীমায়ের ফোন
নীতীশ কুমার দাশ
করুন সুরে মুঠোফোন বাজছে, ফোন আসিছে তাই
থেমে থেমে ফের কাদিছে থামানোর লোক যে নাই।
পাঁচ সাত বার এমনি ডাকিল, ছেলেটি ব্যস্ত কাজে
সাত আটটা পরীক্ষা বাকি রাসায়নিক পরীক্ষাগারে।
অপর প্রান্তে অশ্রুনয়নে ভাবনায় পড়িল মাতা।
ছেলেটি তাহার কোথায় রইল বলিছে না কেন কথা?
বাঁশের খুটিতে হেলিয়া পড়েছে, হৃদয় কাপছে মা’র
ছেলেটি তাহার এত রাতেও করেনি কি আহার?
বাইরে রাতের জোনাক নাচে ভেদিয়া তিমির রজনী
দাওয়ায় বসিয়া চিন্তায় ডুবিছে,করছে প্রতীক্ষা জননী।
মায়ের মনে উকি দেয় ছেলের দুষ্টুমি ভরা কৈশোর
ভরা রৌদ্রে মাঠে ছুটিয়া হইত দুষ্টুমিতে বিভোর।।
কতমানুষের কাঠাল হারিয়েছে, আম,জাম আর লিচু
বিচারে মাকে বলিতে হয়েছে “আমার ছেলে তো শিশু”
সারাদিন পরে সাঝের বেলা আসিত চুপিচুপি।
মায়ের ভয়ে পড়িতে বসিত জ্বালিয়ে কেরোসিনের কুপি।
পড়া তো নয় মাকে বোঝানো,ঘুমের তালে দোলে
আধ্ ঘন্টায় ঝিমিয়ে পড়িত মায়ের স্নিগ্ধ কোলে।।
এমনি করে কৈশোর কেটেছে কত না স্মৃতি আঁকা
মা যে খুলেছে স্মৃতিপট যাবে না তো আর ঢাকা।।
এদিকে ছেলে হিসাব কষছে, মিলাতে পরীক্ষার ফল
হিসাবের চিন্তায় এতই মগ্ন শোনে নি সে ফোন কল।।
হিসাব মিলিয়ে প্রকাশ করবে বিদেশি নামি পত্রিকায়
টোয়েফল দিয়ে পাড়ি জমাবে দূর দেশ আমেরিকায়।
ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে হবে, দিতে হবে অবিচল শ্রম
গবেষনার ফল মিলাতেই হবে হইলে হোক মতিভ্রম।
পরীক্ষার পর পরীক্ষা করছে আসছে না ঠিক পরিণতি
হতাশ হয়ে বসিয়া পড়ে, নেই যে তার কোন গতি।।
দূঃখের সময় মায়ের স্মৃতি জাগিল তার মনে
প্রকৃতি তার শ্বাশত খেল দেখাল আপন করে।।
মায়ের কথা মনে পড়তেই ফোনের নিকট ছুটল
সাত -আটটা ফোনের চিহ্ন মোবাইল পরে দেখল।।
মা যে তার ঠিকই ডেকেছে শুনে নি নিজ কর্ণে
মোবাইল ঠিকই গুনে রেখেছে রাঙিয়ে রক্তিম বর্ণে।।
মায়ের ফোনে ফোন আসিল সময়টা প্রায় মধ্যরাত
অশ্রু মুছে ফোন ধরিতে কাপিছে মায়ের হাত।।
যখন বুঝিল অপর প্রান্তে পুত্র তাহার ডাকিছে ‘মা’ ‘মা স্বরে।
“কোথা গেছিলিরে বাপ?” মোর প্রাণ কাপে যে ভীষণ ডরে।।
“খেয়েছিস রাতে?ঘুমাবি কখন? “ এমনি প্রশ্ন কত।
পুত্র তাহার উত্তর করে মায়েরই মন মতো।।
কতকথা আর কত হাসি সব মুছে দেয় এতক্ষণের ক্রন্দন।
হাসির মূর্ছনায় প্রকৃতিও হাসে ;নিঃস্বার্থ সে স্নেহের বন্ধন।।
দ্রুত ঘুমানোর আদেশটি মাতা শেষ সংলাপে রাখে।
রাত না জাগার মিনতি করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।।
কত যে মাতা এমনি করিয়া নির্ঘুম রাত জাগে
পুত্রের সুদূর শিক্ষাজীবনে মাতার এভাবেই দিন কাটে।