সাতক্ষীরায় ফসলি জমি গিলে খাচ্ছে ইটের ভাটা জনবসতি বিপর্যয়-রহস্যময় ভূমিকায় পরিবেশ অধিদপ্তর

ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট
৯৩

মোঃ তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি

দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় জন ঘনবসতি পূর্ণ ফসলি জমিতে বেড়েই চলেছে ইটভাটা। দিনের পর দিন ফসলি জমি গিলে খাচ্ছে ইটের ভাটা, ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে তিন ফসলি জমি। জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় অন্তত ২০০টি ইটভাটা রয়েছে, যার ৭০ শতাংশই স্থাপিত হয়েছে জনবসতি পূর্ণ ফসলি জমিতে। আবার এসব অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটভাটার অধিকাংশের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ বৈধ কাগজ পত্র না থাকা শর্তেও কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে ইটভাটা চালিয়ে আসছে। মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিষেশজ্ঞদের দাবি- ফসলি জমিতে যে হারে ইটভাটা স্থাপন হচ্ছে তাতে পরিবেশ যেমন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তেমনি মাটির উর্বরতা হারিয়ে ফসলহানির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ফসলি জমি রক্ষায় ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে বলেও মনে করেন তারা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ইটভাটা ফসলি জমি ও জনবসতি এলাকায় স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার দহকুলা এলাকায় সানি ব্রিক্স, বেতলা গ্রামে এসবি ব্রিক্স,রামচন্দ্র পুর গ্রামের বিআরবি ব্রিকস, ছয়ঘরিয়া গ্রামে ঠিকানা ব্রিক্স, স্টার ব্রিক্স, ও সনি ব্রিক্স, বাইপাসে এবিবিসহ অনেক ব্রিক্স রয়েছে। এসব ভাটার একেকটি ৩০-৩৫ বিঘা জমি দখল করে রেখেছে। ভাটার চারিদিকে রয়েছে বোরো ধান, সরিষা, আম, কলাসহ বিভিন্ন ফলের বাগান। কথা হয় দহকুলা গ্রামের সানি ইটভাটার স্বত্বাধিকারী আব্দুল খালেকের সঙ্গে। ফসলি জমি ও জনবসতি এলাকায় ইটভাটা কীভাবে করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৫-৩০ বছর আগে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। তখন কোনো আপত্তি বা সমস্যা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখে শুনেই অনুমোদন দিয়েছে। তাছাড়া নির্মাণকাজের জন্য ইট তৈরির প্রয়োজনও তো রয়েছে। তাহলে ইটভাটা করব কোথায়? আরো অনেকেই ফসলি জমিতে ইটভাটা করেছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শামছুন্নাহার রতœা বলেন, ইটভাটার কারণে সাতক্ষীরায় ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেয়ায় উর্বরতা কমছে। এতে ফসলহানির শঙ্কা রয়েছে। সঠিকভাবে মাটি ব্যবহার করতে না পারলে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইটভাটা স্থাপনের আগে নির্ধারিত ফি দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, ইটভাটা স্থাপন করা হয় অনুৎপাদনশীল কৃষিজমিতে, অর্থাৎ যেখানকার মাটি কৃষিকাজের জন্য অনুপযোগী সে জমিতে। জমিটি হতে হবে অবশ্যই ফসলি জমি থেকে দূরে। কারণ কোনোভাবেই ইট বানাতে গিয়ে ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল বলেন, পরিবেশ আইন বা নীতিমালা না মেনেই সাতক্ষীরায় ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। জেলায় অন্তত ২০০টি ইটভাটা রয়েছে, যার ৭০ শতাংশই ফসলি জমি বা জনবসতি এলাকায়। এতে পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়ছে তেমন জমির উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে, যা ফসলহানির কারণও বটে।’
সাতক্ষীরা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম জানান, আগামীতে যাতে ফসলি জমিতে নতুন কোনো ইটভাটা স্থাপন করা না হয়, সে লক্ষ্যে সমিতির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে যেসব ভাটা ফসলি জমির ওপর করা হয়েছে, তা সরিয়ে নদীর আশপাশে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ফসলি জমিতে স্থাপিত এসব ইটভাটা ফসল উৎপাদনে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছরই বাড়ছে ইটভাটা। খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টা বিবেচনায় এনে দ্রæত এসব ভাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষক নেতারা।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আশরাফুজ্জামান আশু বলেন- কৃষি সমৃদ্ধ জেলা সাতক্ষীরায় বারো মাসই ফসল উৎপাদন হয়। কিন্তু ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। দ্রæত এসব ইটভাটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

- Advertisement -

এই বিভাগের আরও সংবাদ