কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বুধহাটা দ্বাদশ শিব ও কালি মন্দির

ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট
৩৭

মোঃ তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটায় কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী বুধহাটা দ্বাদশ শিব ও কালী মন্দির। স্থানীয়রা জানান, তৎকালীন খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়–লী গ্রামের জমিদার রাজা রাজ বংশী ১১৪৬ সনে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে জমিদার রাজ বংশী খাজনা আদায়ের জন্য বজরা বা নৌকা যোগে বুধহাটায় কাছারীতে আসতেন। একদিন খাজনা আদায়ের প্রাক্কালে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সে সময় স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে মা বলেন, রাজ বংশী আমি তোর হাতে এ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হবো। আমি নদীতে ভেসে ভেসে চলছি। তুই আমাকে ধারন করে প্রতিষ্ঠিত কর। জমিদার ঘুম ভেঙ্গে দেখেন তখন রাত্র দ্বি-প্রহর। তিনি নদীর ধারে ছুটে গিয়ে দেখেন পূজা উপাচারে সজ্জিত একটি ঘট ভেসে যাচ্ছে। সে দিন ছিল চৈত্র মাসের শেষ মঙ্গলবার। তিনি ঘট তুলে এনে ঐ দিনই পূজা করেন এবং মন্দিরের ভিত স্থাপন করেন। সেখান থেকে আস্তে আস্তে মন্দিরের মাহাত্ম্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন তাদের মনোষ্কামনা পূরনে নিত্য পূজা দিতে শুরু করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় বুধহাটা দ্বাদশ শিব ও কালী মন্দির। তৎকালীন একই স্থানে ১২টি মন্দির এটা ছিল ভক্তদের যেমন করে ভক্তি আতুর, তেমনি পর্যটকদের করে ভ্রমনে উৎসাহিত। ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি পরিচালনা করার জন্য জমিদার ৭৪ একর জমি দান করেন। কিন্তু কালের আবর্তে এখন আছে মাত্র ২.০৩ একর। এ ২.০৩ একরের মধ্যে গরুর হাট বসালেও সেখান থেকে মন্দির পরিচালনার জন্য কোন অর্থ পায় না কর্তৃপক্ষ। ১৯৭১ সালে মন্দিরটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়, কিন্তু আজও পর্যন্ত মন্দির সংস্কারের জন্য কোন অনুদান পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালে হিন্দু কল্যা ট্রাষ্টের ১০ লক্ষ টাকার একটি অনুদান পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকলেও আজও তা পাওয়া যায়নি। ১৯৭৬ সালের দিকে নওয়াপাড়া গ্রামের দ্বীনবন্ধু সরকার ও মহাজনপুর গ্রামের কার্ত্তিক দেবনাথ ও রমেশ দেবনাথ মন্দিরটি সংস্কার শুরু করেন। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ের সংস্কার বেশী দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা আরও জানান, ১২টি মন্দির পাশাপাশি থাকলেও এখন মাত্র ছয়টি মন্দির অবশিষ্ট আছে। এসব মন্দিরে ১২টি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ থাকলেও এখন আছে মাত্র ২টি। জানাগেছে, বিভিন্ন সময়ে মন্দির থেকে বাকী শিব লিঙ্গ গুলো চুরি হয়ে গেছে। এখানে চৈত্র মাস ব্যাপী বিভিন্ন উপাচারে শিব পূজা ও জল প্রদান করা হয়। তাছাড়া প্রতি বছর শিবরাত্রি, জন্মাষ্টমী, নামযজ্ঞ, জগদ্বাত্রী পূজা, সরস্বতী পূজা, নিত্য পূজা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, বুধহাটা দ্বাদশ শিবকালী মন্দিরের স্থাপত্য, অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। সরকারী সহায়তার অভাবে এই প্রাচীন নির্দশনটি মরতে বসেছে। এটি সংস্কার ও সংরক্ষনের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।

- Advertisement -

এই বিভাগের আরও সংবাদ