সাতক্ষীরায় ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি এক দলিলে বাজিমাত সদরের সাব রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে

জি এম মামুন নিজস্ব প্রতিনিধি

কথাই বলে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই ঠিকই এমনই চরিত্রের দুইজন ব্যক্তিগত লাভবান, গোপন আঁতাত ও যোগসাজশের কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ে প্রধান বাধা বা অন্তরায় হয়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদরের সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখক সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানা যায়, জমিতে ৭ তলা বাড়ি থাকার পরেও প্রকৃত তথ্য গোপন করে দলিল লেখক সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান এর মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে, বিক্রয় কবলা দলিল রেজিস্ট্রেশনের ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় তোলপাড় চলছে। তবে এসব অপকর্মের ঘটনা সহসাই ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে জোরালা তদবির চালানো হচ্ছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, গত ২৪শে নভেম্বর-২০২৫ একটি রেজিস্ট্রেশনকৃত দলিল সাতক্ষীরা সদরের (ইসলামী হাসপাতালের পশ্চিম পার্শ্বে)-এর মৃত শেখ আব্দুল কাইয়ুম কন্যা সালমা খাতুন ৩টা দলিল সূত্রে প্রাপ্ত হয়, সাতক্ষীরা টু খুলনা হাই উয়ে রোড এর সাথে পলাশপোল মৌজায় সাবেক ৬১৭৩ দাগের বাটা ১৪৬৫৩ দাগের হাল ১৪৫৭৭ দাগের ৬ শতাংশ জমিসহ পাকা আবাসিক স্থাপনা ব্যক্তিগত লাভের কারণে ৩ কোটি টাকায় (দলিল মূলে ) বিক্রয় করেন। ৭ তলা বাড়ির যাহার স্থাপনা ১৬০০০ থেকে ১৮০০০ স্কায়ার ফুট। উক্ত আবাসিক পাকা স্থাপনাসহ জমি ক্রয় করেন পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর। দলিল লেখালেখির কাজ সম্পাদন করেন মোঃ মিজানুর রহমান (দলিল লেখক সনদ নং-১১/১৬)। জমি রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত সরকারি আবাসিক স্থাপনার উপরে( ৫.৫% + ৬%)= ১১.৫%ফিসের (ভ্যাট-ট্যাক্স) পাশাপাশি যদি আবাসিক (স্থাপনা) থাকে তাহলে অর্থবিল-২০১৯ আওতায় এফএফ-৫৩ (উৎসেকর) মোতাবেক আরও অতিরিক্ত ৫% হারে সরকারের রাজস্ব (ভ্যাট-ট্যাক্স) আদায় করে চালানের মাধ্যম রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার বিধি-বিধান বা আইন আছে।
কিন্তু সদরের সাব-রেজিস্ট্রার অমায়িক বাবু ও দলিল লেখক সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে আইনের প্রতি বদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উক্ত বিক্রয় কবলা দলিলে নাম সত্ত্বে কিছু আবাসিক স্থাপনা নেই মর্মে উল্লেখ করে । অতিরিক্ত ৩০ লাখ টাকার ভ্যাট-ট্যাক্স (রাজস্ব) ফাঁকি (রিবেট) দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার অভিযাগ রয়েছে।
প্রায় ৩০ লক্ষ এর অধিক ভ্যাট-ট্যাক্স (রাজস্ব) ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে দলিল লেখক সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে।
দলিলদাতা সালমা খাতুন জানান, আমার বাসা বাড়ির সব কাগজপত্র দলিল লেখক সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমানকে দেওয়া হয়েছে। যদি বাসা-বাড়ির তথ্য গোপন করে রাজস্ব ফাঁকি দেয় তার জন্য তারাই দায়ী। দাতা আরোও বলেন দলিল লেখক মোঃ মিজানুর রহমান আমাকে বলেন যে আপনি বলবেন বাড়ি সহ ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করছি। আমাকে যেভাবে শিখায়ে দিয়েছে সেই ভাবে বলছি। দলিল লেখককে বার বার বলেছি দলিলে পাকা বাড়ি উল্লেখ করার জন্য। কিন্তু সে বলছে অল্প স্কায়ার ফুট দিলে হবে কোন সমস্যা হবে না। তথ্য গোপন করে বাড়ি বা অল্প স্থাপনা উল্লেখ করে দলিল করে দিয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দিলে দলিল লেখক মোঃ মিজানুর রহমান দিয়েছে। তাই সমস্ত দায়-দায়িত্ব তার।
দলিল গ্রহিতা মো: জাহাঙ্গীর এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোন নং ফোন দিলে তার ফোন নং টি বন্ধ দেখায়।
একাধিক সূত্র জানা গেছে, সদরের সাব-রজিস্ট্রার অফিস ঘুষ-দুর্নীতির কারিগর হিসেবে একের পর এক সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অভিযাগ উঠলেও দেখার কেউ নেই বলে সাতক্ষীরা সদরের সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে সাব-রেজিস্ট্রার অমায়িক বাবু বলেন, দলিল লেখকর আমাকে না জানালে কীভাবে জানবো। এসব ঘটনায় খুব ঝামেলা হয়। ডেমারেজও দেয়া লাগে। তিনি কোনো ঘুষ খান না। যদি কেউ বলে থাকে তাহলে মিথ্যা বলেছে।