মোঃ তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা জেলার ৭ উপজেলার মেঠোপথের সড়কের দু’ধারে অযত্নে ও অবহেলায় বেড়ে ওঠা গ্রামবাংলার অতি পরিচিত গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী বুনো পুষ্পজাতীয় উদ্ভিদ ভাঁট। মাঠে প্রান্তরে, রাস্তার পাশের বনজুঁই সৌরভে সুভাষিত করে তুলছে মনকে। রাতে আধারে ছড়াচ্ছ সুভাষিত সৌরভ। ফুলগুলো সহজেই মানুষের নজর কেড়ে নেয়।
এই ফুল দিনে ফোটে এবং রাতে সৌরভ ছড়ায়। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সাদা ভাঁট ফুলের সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যায় পথচারীদের। গ্রাম বাংলার চিরচেনা এ ফুলটি হরহামেশা দেখা গেলেও সাদা ভাঁট ফুলের দিকে তাকালে অনেকের মনে আলাদা একটা অনুভূতি জাগে। অঞ্চলভেদে এ গাছের ফুল ভাইটা ফুল, ঘেটু ফুল, বনজুঁই ফুল, ঘণ্টাকর্ণ হলেও সাতক্ষীরায় ভাঁট ফুল নামে এটি সমাধিক পরিচিত। এ ফুল ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ফুটতে দেখা যায়। বিশেষ করে পরিত্যক্ত মাঠ, বন, রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে ভাঁট ফুলের ঝোঁপ চোখে পড়ে। ভাঁট গাছের প্রধান কান্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান। এ গাছের পাতা দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদন্ডে ফুল ফোঁটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশ্রণ আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি ফুল ফোঁটে।
এ ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। রাতে বেশ সুঘ্রাণ ছড়ায় এ ফুল। ফুল ফোঁটার পর মৌমাছিরা ভাঁট ফুলের মধু সংগ্রহ করে। বসন্ত ঋতুতে মাঠে প্রান্তরে যে ফুল গুলো সহজেই মানুষের নজর কাড়ে তা হলো বনজুঁই। বনজুঁই বা ভাঁট গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই ফুলটি অঞ্চল ভেদে ভাঁটি ফুল, বাইট ফুল, ভান্টকী, ভাঁট ফুল, ভাত ফুল, ঘেঁটু, চৈতিগাড়া ফুল, ঘণ্টাকর্ণ নামে পরিচিত। ভাটি ফুল বাংলাদেশের মানুষের একেবারে চোখের সামনে অনাদরে থাকা একটি ফুল। এটি বুনো ফুল। ঋতুরাজ বসন্তে দেখা যায় এই ফুল। ঝোপ-ঝাড়ে, জঙ্গলে, রাস্তার ধারে, এখানে-সেখানে নিজের সুন্দর রূপ ছড়িয়ে থাকে ভাটি ফুল বা বন জুঁই। এ ফুলটি বাংলাদেশের আদি ফুল।
ভাঁট গাছের প্রধান কা- সোজাভাবে দন্ডায়মান, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদ-ে ফুল ফোটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশেল আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি ফুল ফোটে। এই ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। ফুল ফোটার পর মৌমাছিরা ভাঁট ফুলের মধু সংগ্রহ করে। গ্রামের মেঠো পথের ধারে, পতিত জমির কাছে এরা জন্মে থাকে এবং কোনরূপ যতœ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। এছাড়াও পাহাড়ি বনের চূড়ায় এবং পাহাড়ি ছড়ার পাশে এদের উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষনীয়।
বাংলাদেশের মাটিতে এই ফুলের গাছ অত্যন্ত অনাদর আর অবহেলায় জন্মে এবং বেড়ে ওঠে। গাছ গুল্ম জাতীয়। ছোট আকৃতির ও বেশ ঝোপালো হয়। সবুজ বহুপত্রী ভাটি গাছের ফুল ধবধবে সাদা। ফুল ফোঁটে থোকায় থোকায়। দেশের সর্বত্রই দেখা যায় এই ফুল। তবে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ ফুলটি। ভাঁট গাছ ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এর পাতার রস শিশুর জ্বর দূর করে। ভাট ফুল ও পাতার প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। ফ্ল্যাভোনয়েড থাকার জন্য এটি ক্যানসার দমনে সহায়ক। এছাড়াও কৃমি, কোলেস্টেরল, চুলকানি, ব্লাড সুগার ও উদরাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে এটি সাহায্য করে।তবে এটি খুব বেশি স্বীকৃত নয়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল এলাকায় কৃষিজীবী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভাঁট ফুল দিয়ে ভাঁটি পুজোর আয়োজন করে থাকেন। সাতক্ষীরা যশোর, বাগেরহাট, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর অঞ্চলের মানুষ ভাঁটি পুজো করে। সনাতন ধর্মালম্বীরা চৈত্রের শেষ দিন এই ফুল দিয়ে ভাঁটি পূজা করছেন। ভাঁট ফুল দিয়ে সনাতন ধর্মের লোকেরা ভাঁটি পূজার আয়োজন করে ফাল্গুনের শেষ দিনটিতে। তবে পূজা শুরু হয় মাসের প্রথম দিন থেকেই। ঘরের কাছে ভিটা তৈরি করে, চারপাশে গাছের কা- দিয়ে বর্গাকার ঘর তৈরি করে ভাঁট ফুল সংগ্রহ করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পূজা দেওয়া হয় এবং শেষ হয় ফাল্গুনের শেষ দিনে। তাছাড়া গবাদি পশুর রোগবালাই থেকে মুক্তির কামণায় এ পুজো করে থাকেন। এ পূজার নাম অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন,‘ ভাঁটফুল গুল্মজাতীয় দেশী বুনো পুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বুনো ফুল, গাঁয়ের মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অযতেœ ফুটে থাকে এ ফুল। ফুল গাছটি ভাঁট বলে পরিচিত হলেও স্থানভেদে এবং ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীতে এর ভিন্ন ভিন্ন নামও রয়েছে। অনেকে একে বনজুঁইও বলেন। এ গাছের ভেষজ গুণাগুণও রয়েছে।