দীন ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি:
শিক্ষক সংকটসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় চলতি শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এসব কথা বলেন। তিনি জানান, ভর্তি পরিক্ষাকে কেন্দ্র করে সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম, বিশেষ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ, অভিভাবকদের জন্য টেন্টের ব্যবস্থা, সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য ওয়াশরুমসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবার প্রতি আসনের বিরপরীতে ৪২ জন শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে।
উপাচার্য বলেন, আইনের বাধ্যবাধকতা, হাইকোর্ট ও মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা ছিলো। আামরা অতি সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো কাটিয়ে উছেছি। আশা করছি আগামীতে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হলে এই ব্যবস্থা নিতে পারবো। এজন্য ডিন মহোদয়দের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে রাজশাহীর পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও খুলনায় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। একটি পরিসংখ্যানের চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, এই ব্যয় চার থেকে আট হাজার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী ৫ থেকে ৭ মার্চ ২০২৪ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান)/স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবছর এ, বি ও সি এই তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। অ ইউনিটে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ২৭টি বিভাগসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত আছে। ই ইউনিটে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ৬টি বিভাগ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এবং ঈ ইউনিটে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৬টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত আছে।
এ বছর বিশেষ কোটাসহ মোট আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৮টি এবং কোটা বাদে আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৯০৪টি। এই আসনের বিপরীতে মোট ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৮০টি চূড়ান্ত আবেদন জমা হয়েছে। অ ইউনিটে ৭৪ হাজার ৭৮৫টি, ই ইউনিটে ৩৪ হাজার ৫৪১টি এবং ঈ ইউনিটে ৭৬ হাজার ৩৫৪টি চূড়ান্ত আবেদন সম্পন্ন হয়েছে। একক আবেদনকারীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৯৭৭। এর মধ্যে পুরুষ আবেদনকারীর সংখ্যা ৯০ হাজার ৪৫৬ এবং নারী আবেদনকারীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫২১। তবে কোটা বাদে আবেদনকারীর সংখ্যা অ ইউনিটে ৬৯ হাজার ৫২৭, ই ইউনিটে ৩২ হাজার ৬১৪ এবং ঈ ইউনিটে ৭০ হাজার ৯৭৬।
এবারে এক ঘণ্টাব্যাপী ভর্তি-পরীক্ষা গঈছ পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষা চলাকালে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে পারবে না। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ও ক্যালকুলেটরসহ মেমোরিযুক্ত অন্য কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে রাখা যাবে না। পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে পরীক্ষা ভবনের গেট ও ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষের প্রবেশগেট খুলে দেয়া হবে।
ভর্তি-পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ২৫ টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ভিসি জানান, ভর্তি-পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্বিকভাবে সচেষ্ট আছে। এ বিষয়ে ভর্তি-পরীক্ষা কমিটি ও উপ-কমিটিসমূহ, ইউনিটভিত্তিক কমিটিসমূহ, পুলিশ প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত আইন-শৃংঙ্খলা বিষয়ক কমিটিসমূহ, র্যাব ও সকল গোয়েন্দা সংস্থা, প্রক্টর দপ্তর, ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর, জনসংযোগ দপ্তর, আইসিটি সেন্টার, পরিবহণ দপ্তর এবং হল প্রশাসন নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে চলেছে।
ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি এবং অসদুপায় অবলম্বন একটি আলোচিত বিষয়। এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে, কখনও কখনও অসাধুচক্র ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কিংবা তাদের অভিভাবকের নিকট থেকে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নিয়ে থাকে। এজন্য তারা কখনও কখনও শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কাগজপত্র জমাও রাখে এবং রেজাল্ট শিটে নাম দেখেই অর্থ দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে ঐ সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নিজ যোগ্যতায় ভর্তির সুযোগ পেয়েও প্রতারণার শিকার হয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে এমন প্রতারণার খপ্পরে না পড়ার জন্য সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
গত বছর ভর্তি-পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় প্রাথমিকভাবে ৭ জনকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে ঐ ৭ জনের তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াতির সাথে জড়িত আরো ১৪ জনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। এখানে কোনো ধরনের জালিয়াতি বা কারসাজির সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা সজাগ আছে।
প্রসঙ্গত ভর্তি-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধন থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ, বিষয় ও হল নির্বাচন, মাইগ্রেশনসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হবে। এতে করে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নির্ভুল ফল প্রকাশ করা এবং সর্বোপরি জাল-জালিয়াতি ও কারসাজি রোধ করা সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিশেষজ্ঞগণ সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য ভর্তি হবার সময়ও প্রতিটি বিভাগ পরীক্ষার্থীর ছবিগুলো মিলিয়ে দেখবেন। এছাড়াও বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত মূল পরিচয়পত্র দেবার সময়ও ঐ পরীক্ষার্থীর ছবি আইসিটি সেন্টার মিলিয়ে দেখবেন। যদি এক্ষেত্রে কোনো অসংঙ্গতি পরিলক্ষিত হয় তাহলে শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।