ঢাকা: দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাংলা নতুন বছর। কিন্তু ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে আততায়ী। তাই নতুন বছরকে বরণের বদলে এখন আমাদের সব আয়োজন শুধু প্রাণ বাঁচানোর।
শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব আজ স্তব্ধ অবরুদ্ধ করোনা ভাইরাস ঠেকাতে। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। আমাদের এখানেও চলছে সাধারণ ছুটি। অঘোষিত লকডাউনে থমকে গেছে জীবনের সব ব্যস্ততা। শঙ্কা আর মন খারাপ করা এ সময়ে তাই পহেলা বৈশাখে বাঙালির প্রাণের উৎসব এবার হচ্ছে না। উৎসবপ্রিয় মানুষকে ঘরের বাইরে এনে বিপদের মুখে না ফেলার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আয়োজকরা।
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সবচেয়ে বর্ণিল আয়োজনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। আগেই জানা ছিলো সেটি এবার হচ্ছে না। তবে ‘ডিজিটালি’ মঙ্গল শোভাযাত্রার একটি পোস্টার তৈরি করে তার মাধ্যমে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে। যাতে সব ভয়ের বিপরীতে মানুষের জয়গানের কথা উল্লেখ করছে চারুকলা অনুষদ।
কালো রঙের পোস্টারটির একেবারে ওপরে লেখা বৈশাখ ১৪২৭। এর নিচে লেখা ‘মানুষ ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু মানুষ পরাজিত হয় না’। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিশ্বখ্যাত বই ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে। যার ব্যাখায় উল্লেখ করা হয়েছে- ‘এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ সেরা। বর্তমানের এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষ জয়ী হবেই।’
এর নিচে নীলাভ রঙের বৃত্তের চারপাশে প্রস্ফূটিত ফুল অঙ্কিত রয়েছে। যার মাধ্যমে চারুকলা বার্তা দিচ্ছে আবারও পৃথিবী জেগে উঠবে ফুলের মতো করে। এর নিচেই এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ‘মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’। কবিগুরুর এ পঙক্তিটিই এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার বার্তা।
এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছরই আমরা পোস্টার করি। এবারও করেছি। তবে সেটা প্রতিপাদ্যের ব্যাখ্যাসহ। প্রতিবার প্রতিপাদ্যটি আমরা নানা মোটিভের মাধ্যমে তুলে ধরি। এবার সেটি হবে না বলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সম্পৃক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন চারুকলা অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকরা। তারা বিধি মেনে বানাচ্ছেন পারশোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই। যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দেওয়া হচ্ছে।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ছোট ছেলে প্রকৌশলী ময়নুল আবেদীনের পরিকল্পনায় এ কাজটি হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- হু’র নির্দেশনা অনুযায়ী পিপিইগুলো তৈরি করা হচ্ছে।
নিসার হোসেন বলেন, এই পিপিইগুলো বারবার ব্যবহার করা যাবে। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী পিপিইগুলো তৈরি করেছি। যার জন্য বিএসএমএমইউ‘র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহানা আখতার রহমান ও আইসিইউ বিভাগের প্রধান খন্দকার মানজারে শামীমের পরামর্শ নিয়েছি। সর্বোপরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনও নিয়েছি।