আমিনুল ইসলাম :সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:গত দুই বছর ধরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি, সরকারি চাকুরি ও বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে টাকা নেয় শাহনাজ ফুজি ও তার স্বামী নিঝুম। টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেয় প্রতারক দম্পতি। এর প্রেক্ষিতে রবিবার (২৫ আগষ্ট) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের মানপুর শল্লা মুর্শিদা গ্রামে শাহনাজ ফুজির বাড়ির সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে শতাধিক ভুক্তভোগী পরিবার। মানববন্ধন শুরু করতেই শাহনাজ ফুজি লোকজন নিয়ে মারধর করে ভুক্তভোগীদের উপর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা। তাদের উপরেও হামলা করে শাহনাজের লোকজন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে প্রতারক শাহনাজ ফুজি ও তার স্বামীকে আটক করা হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, সদর উপজেলার ঝিলিম, গোবরাতলা ও বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে সরকারি বাড়ি ও বিভিন্ন কাজ করে দেয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ করে শাহনাজ ফুজি। এমনকি মানপুর শল্লা মুর্শিদা গুচ্ছগ্রামে থাকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি বাড়ি বিক্রি করে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের তাড়িয়েছেন শাহনাজ ও তার স্বামী। ২০ হাজার টাকা করে নতুন করে আরও কয়েকটি বাড়ি বিক্রি করেছেন বলে জানা যায়। এসব প্রতারণা করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাজশাহীতে আলিশান বাড়ি করেছে ফুঁজি ও তার স্বামী ঝিনুক।
সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের সল্লা গ্রামের ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম জানান, স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে অন্যের জায়গায় বসবাস করি। নিজের কোন ভিটেমাটি না থাকায় একটি সরকারি বাড়ি পাওয়ার আশায় ঋণ করে শাহনাজ ফুজিকে ১২ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। টাকা দেয়ার ১১ মাস পার হয়ে গেলেও বাড়ি দেয়নি। আমার মতো অনেক মহিলা তাকে টাকা দিয়ে ঘুরছে। কিন্তু ঘরও দেয়নি, টাকাও ফেরত দেয়নি। তাই আজকে মানববন্ধন করতে আসি। উল্টো আমাদের উপরেই হামলা করে মারধর করে। গোবরাতলা ইউনিয়নের আমারক গ্রামের আব্দুল মতিন জানান, বাড়িতে পানির জন্য একটি নলকুপের প্রয়োজন দীর্ঘদিনের। স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানকে বলেও এর কোন সুরাহা পায়নি। পরে শাহনাজ নলকূপের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা নেয়। এরপর দিব দিচ্ছি বলে ঘুরাচ্ছে। জোর করে টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো আমাদেরকেই নানারকম ভয়ভীতি হুমকি দেখায়। পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। মো. আব্দুল্লাহ নামের এক ষাটোর্ধ কৃষক বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে সরকারি বাড়ি ও বিভিন্ন কার্ড করে দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। কাউকে বলে গরু, কাউকে ছাগল আবার কাউকে টিন দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয় শাহনাজ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে অভিযোগ দিলেও এনিয়ে কোন সুরাহা পাওয়া যায়না। ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম জানান, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে এসেছিলাম। হঠাৎ করে লোকজন নিয়ে আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা করে। পরবর্তী এলাকার সবাই মিলে প্রশাসনকে অবহিত করলে তারা এসে আটক করে। আমরা শাহনাজ ফুজির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি টাকা ফেরত চাই। সারিউল ইসলাম নামের এক আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী বলেন, সরকার আমাদেরকে জমিসহ বাড়ি দিয়েছে। আমরা গত ৩ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। হঠাৎ করে আমাদের বাড়ি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে আমাদেরকে তাড়িয়ে দেয় শাহনাজ ফুজি। এছাড়াও আরও অনেকগুলো বাড়ি বিক্রি করেছে। তাদেরকেও বাড়ি ছাড়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে সে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসে হামলাী শিকার হওয়ার কথা জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও। বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউসুফ আলী বিশ্বাস বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারগুলো শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের আয়োজন করলে তাদেরকে বাধা দিয়ে মারধর করে। খবর পেয়ে গ্রাম পুলিশ সদস্য নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে আমার উপরেও হামলা করে শাহনাজ ফুজি ও তার লোকজন। আমরা তার কঠোর শাস্তির দাবি জানায়। শাহনাজ ফুজি বিভিন্ন প্রতারণার একাধিক লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন। তিনি জানান, খবর পেয়ে সরেজমিনে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পাঠানো হয়। বাড়ি দেয়ার নাম করে টাকা আত্মসাত ও বিক্রিসহ তার সমস্ত প্রতারনার বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সংশ্লিষ্টতা পেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা যায়, শতাধিক পরিবারের কাছে প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রতারক শাহনাজ ফুজি ও তার স্বামী।দফায় দফাই মানববন্ধনে হামলা শিকার ভুক্তভোগী অনেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হারালে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে দুজন প্রতারককে আটক করে সদর মডেল থানায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতারক আইনে মামলা করে কোর্টে সপর্দ করেন।