দেশকে যারা ভালোবাসে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে না-ডাঃ শফিকুর রহমান

তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি :

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের উপর জুলুম করা হয়েছে, আমরা দেশ ছেড়ে কোথাও পালিয়ে যাইনি। দেশকে যারা ভালোবাসে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে না। দেশের প্রতি যাদের দায়বদ্ধতা নেই তারা যেকোন সময় দেশকে খোদা হাফেজ বলতে পারে।
আমরা বলবো না। আমরা আমাদের আল্লাহর কাছে খুবই বিনীত-কৃতার্থ, তিনি এমন একটি সুন্দর দেশে আমাদের পয়দা করেছেন। আমরা এই দেশ নিয়ে বাঁচতে চাই। এই দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে চাই। এই দেশকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত করতে চাই। শনিবার ৩০ শে নভেম্বর-২০২৪ ইং দুপুরে সাতক্ষীরা সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম মুকুল উক্ত কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।কর্মী সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাসার, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান প্রমুখ। কর্মী সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। ইনসাফ কায়েম করতে চাই। যেখানে মানুষ চাইলেও অধিকার পাবে, না চাইলেও অধিকার পাবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মানুষ যেন শিক্ষা পেয়ে মানুষ হয়। শিক্ষা নিয়ে যেন ডাকাত না হয়। এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে চাই।
জামায়াত আমীর বলেন, মা বোনেরা ঘরেও সুরক্ষিত থাকবে, কর্মস্থলেও সুরক্ষিত থাকবে। তাদের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় যে, আমরা ক্ষমতায় আসলে নারীদের ঘর থেকে বেরুতে দেওয়া হবে না। কিন্তু কথা দিচ্ছি এমন হবে না।
তিনি আরও বলেন, মহানবী (স.) সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও নারীদের যুক্ত করেছেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে নারীদের যুক্ত করেছেন। তাই আমরা তাদের আটকে রাখার কে। তারা সামর্থ অনুযায়ী দেশের জন্য আত্মনিয়োগ করবে। তাদের পোশাক নিয়ে আমরা বাধ্য করবো না। তারা ইচ্ছা খুশি মতো পোশাক পরতে পারবে।
আমরা এমন একটি দেশ চাই যেখানে মসজিদ মন্দির মঠ গীর্জা কোন কিছুই পাহারা দেওয়া লাগবে না উল্লেখ করে বলেন, আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চমৎকার বাগান। এই বাগানে মাঝে মধ্যে হুতোম পেচা ঢুকে পড়ে। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীও ভিআইপি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা তিন দিন পরিষ্কার না করলে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারবো না। তাই তাদেরও মর্যাদা দিতে হবে। সেই সম্প্রীতির বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। আমরা জাতীয় স্বার্থে দল ও ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে চাই। এই দেশকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ বানাতে চাই। কিন্তু আকাশে কালো শকুন ঘুরছে। এই শকুন মাঝে মাঝে ফুস করছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। যে যে যেভাবেই উস্কানি দেক, আমরা ফাঁদে পা দেব না।
তিনি বলেন, কুরআন দ্বীন ও মজলুমের কথা বলতে গিয়ে সারাদেশে যত মানুষ প্রাণ দেননি, তার চেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছে সাতক্ষীরার মানুষ। তাই জামায়াতের কাছে সাতক্ষীরার অবস্থান অনন্য উচ্চতায়।
জামায়াত আমীর বলেন, আমাদের দেশে অফুরন্ত সম্পদ। কিন্তু তা কাজে আসছে না। যারাই ত্রাতার দায়িত্বে থাকে, তারাই পকেট ভরে। বিগত সরকার সাতক্ষীরার মানুষের উপর জুলুম করেছে। খুন করেছে। গুম করেছে। জনগণের অধিকার দেয়নি। তারা ৫৭জন সেনা কর্মকর্তাকে খুন করেছে।
জামায়াতের দুজন আমীরসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশকে খুনের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। শত জুলুম অত্যাচারের পরও আমরা পালিয়ে যায়নি। দেশকে যারা ভালোবাসে তারা পালাতে পারে না। আমরা এই দেশকে গড়তে চাই। এই দেশের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা ছাড়বো না।
এর আগে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জামায়াতের কর্মী সমর্থকরা সম্মেলনস্থলে আসতে থাকেন।
দুপুর হতে না হতেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ।
এর আগে সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা পল্লীমঙ্গল হাইস্কুল মাঠে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের রোকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি।