আমার নিজের বিচার আমি নিজে করে গেলাম, এলাকাবাসী সুখী হোক।’— এমনই হৃদয়বিদারক বার্তা রেখে আত্মহত্যা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ।মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় দক্ষিণ জামশা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মৃত্যুর আগে ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি আরো লিখেছেন ‘তার চোখ, কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করা হয় যেন।’
নিহত শাকিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি দক্ষিণ জামশা গ্রামের নাসিরুদ্দিন আহমেদের ছেলে। আত্মহত্যার আগে গত সোমবার রাতে ফেসবুকে চারটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন শাকিল।সবশেষ পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি নাস্তিক নই, গ্রামের সবাই আমাকে নাস্তিক বলছে। আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে, আমি নবী মুহাম্মদকে কোনো কটূক্তি করিনি। আমাকে নিয়ে আমার বাবা অনেক গর্ব করত, গ্রামের সবাই আমাকে অনেক সম্মান করত। আজ আমি আমার নিজের আপন মানুষের কাছে আমার সম্মান হারিয়েছি। এছাড়া আমার বাবাকে সবাই গালি দিবে, আমার মাকে সবাই অসম্মান করবে, এই লজ্জা আমি কখনো সহ্য করতে পারব না। একটা ছেলে হয়ে নিজের বাবা–মায়ের মানসম্মান আমি এভাবে নষ্ট করে দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে পারব না। কোনো দিন আমি গ্রামে মাথা তুলে চলতে পারব না। আত্মহত্যা মহাপাপ আমি জানি। আমি অনেক পাপ করেছি, আজ আর একটা শেষ পাপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।’
এর আগে, তিনি আরো একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘আমি যে কমেন্ট করেছিলাম সেখানে আমার একটা ভুলের জন্য আজ আমি আল্লাহর কাছে তওবা করছি ভবিষ্যতে কখনো কোনোদিন এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না, আর আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, দয়া করে আমাকে শেষ বারের মতো ক্ষমা করুন।’সেদিন রাতে আরো একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘এই কমেন্টটি পরে ডিলিট করা হয়েছিল, এই কমেন্ট যার পোস্ট এ করা হয়েছিল তার নাম লিখে করা হয়েছিল মাহমুদুল লিখতে গিয়ে সেটা মুহাম্মদ টাইপ হয়েছিল, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বা তার বিবি দের নিয়ে কোনো কমেন্ট করিনি। হযরত মুহাম্মদ (স:) আদিম যুগের নবী ছিলো না। এখানে আমি আদিম যুগের শব্দ ব্যবহার করেছি। এটা নিয়ে বিশাল একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। আল্লাহ ও তার রাসুলদের প্রতি ইমান আছে। রমজানে সব গুলো রোজা রাখি, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে না পারলেও শুক্রবার জুম্মার নামাজ নিয়মিত আদায় করি। যদি প্রকৃতই আমার ইমান না থাকত তাহলে ধর্মীয় কোনো বিধান পালন করতাম না। আমি চারুকলায় পড়াশোনা করি এটা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে কথা শুনতে হয়েছে, এ জন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। এই কমেন্টটি আনুমানিক প্রায় ১ বছর আগের, সেই সময়ই আমি এটি ডিলিট করেছিলাম।স্বজন ও পুলিশ জানিয়েছেন, ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–ষকে নিয়ে এক ব্যক্তির পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন শাকিল। পরে সেটি ঘিরে স্থানীয় কিছু লোক তাকে হুমকি দেন। বাড়িতে গিয়েও বিভিন্নজন তাকে ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখান। এ পরিস্থিতির কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম বলেন, শাকিল তার নিজ ফেসবুক আইডি থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তার স্ত্রীদের নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেন অনেক মাস আগে। পুরোনো ওই মন্তব্যের স্ক্রিনসট সম্প্রতি ভাইরাল হয়। পারিবারিক মানসম্মানের কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার মরদেহ মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।