সাজ্জাদ হোসেন সাজু(বিশেষ প্রতিনিধি)
কয়েক দিন আগে মায়ের কোল আলো করে জন্ম নেয় এক ছেলেশিশু। কিন্তু জন্মের পর মা-বাবার আদর পাওয়ার ভাগ্য তার নেই। কারণ, মা মানসিক ভারসাম্যহীন। আর বাবার পরিচয় মেলেনি। এ পরিস্থিতিতে তার দায়িত্ব নিয়েছে রফিকুল ইসলাম-ফারজানা আক্তার দম্পতি। এ ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায়।
মঙ্গলবার বিকেলে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা কবীর শিশুটিকে তুলে দেন রফিকুল ইসলাম-ফারজানা আক্তার দম্পতির হাতে। নিঃসন্তান ওই দম্পতি ওই নবজাতককে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
এ সময় উপস্থিত সবার উদ্দেশে ইউএনও বলেন, রফিককে অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব দিলেও শিশুটির প্রতি তাঁর দায়িত্ব শেষ হয়নি। তিনি শিশুটির বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখবেন। পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে তার পাশে থাকবেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৪ জানুয়ারি চরভদ্রাসনে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী (৩৯) শিশুটির জন্ম দেন। ওই দিন সদর ইউনিয়নের ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রাম এলাকায় ধাই মা হিসেবে পরিচিত রাজিয়া বেগমের মাধ্যমে এক বাড়িতে ছেলেশিশু প্রসব করেন ওই নারী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই মাস আগে ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী (৩৯) ফরিদপুর চরভদ্রাসনের সদর ইউনিয়নের ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রাম এলাকায় আশ্রয় নেন। এলাকার লোকজন তাঁকে খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ১৪ জানুয়ারি উপজেলার ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রাম এলাকায় ধাই মা হিসেবে পরিচিত রাজিয়া বেগমের মাধ্যমে এক বাড়িতে ছেলেশিশু প্রসব করেন ওই নারী। জন্মের পর স্থানীয় আছিয়ার বাড়িতে রাখা হয় শিশুটিকে। শিশুটির নাম রাখা হয় আহম্মদ ইসলাম। সে সময়ে লাবনি নামের এক নারী আহম্মদকে দুধ পান করাতেন। অনেকেই আহম্মদ ইসলামকে দত্তক নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে সব দিক বিচার–বিবেচনা করে উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী নিবাসী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম-ফারজানা আক্তার দম্পতিকে ওই শিশুর লালন–পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জাহিদ তালুকদার, সমবায় কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহমুদুল হক, ইউপি সদস্য বাবুল মোল্লা, আছিয়া খাতুন প্রমুখ।
চরভদ্রাসন সদর ইউপির চেয়ারম্যান আজাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, রফিকুল নিঃসন্তান। একটি সন্তানের জন্য সে চারটি পর্যন্ত বিয়ে করেছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী সন্তান সম্ভাবা হওয়ার পর থেকে রফিকুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ওই নারীর দেখভাল করে আসছিলেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান আরও বলেন, শিশুটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে রফিকুলকে দিয়ে শিশুটির নামে ১৩ শতাংশ জমি লিখে দেওয়া হয়। ওর শিক্ষার জন্য ৩ লাখ টাকা ১৫ বছর মেয়াদি স্থায়ী আমানত হিসাবে রাখা হবে। এসব শর্ত নিয়ে রফিকুলের সঙ্গে একটি চুক্তিও করা হয়েছে