কিছু কথা মানুষের জীবনে দাগ কেটে যায়, এ রকম একটা দাগ কেটে ছিল ইএটি এলের মার্কেটিং ডিরেক্টর শারমিন মাহজাবীনের। ‘মানুষ বেঁচে থাকে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, ক্ষমতা, আজ আছে মানুষ আপনার সামনে পেছনে ঘুরবে, কালকে নেই, কেউ আর ডাকতে বা দেখতে আসবে না। তাই কাজ করে যান, নিরন্তর কাজ করে যান, মেধাকে আরো শানিত করুন, ভালো কাজের মধ্যে থাকলে, ভালো বন্ধু অল্প ক’জনই যথেষ্ট’ এটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কেটিং এবং বিপণন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন শারমিন মাহজাবীন।
সাম্প্রতিককালে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বিষয়ক অনলাইন সাইট, ই-পোর্টাল এডুটিউববিডি.কম প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই ই-লার্নিং প্লাটফর্ম এ বিনামূল্যে বিভিন্ন ক্লাসের সব বিষয়ের ফ্রি ভিডিও ক্লাস ছাড়াও, অনলাইনে কোর্স তৈরি করা, প্রশ্ন করে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া, লাইভে আগে থেকে শিডিউল করে ভিডিও ক্লাস নেয়া এসব বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে এই প্লাটফর্মে। বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো ভালো শিক্ষক অনলাইনে হাজার হাজার ছেলেমেয়েদের কাছে তাদের লেকচার, ভিডিও, নোট পৌঁছে দিতে পারেন। কিন্তু ব্যাপারটাকে করতে হয় ফ্রি-তে, ফেসবুক বা ইউটিউবের মাধ্যমে। এডুটিউববিডি. কম এ বিষয়টি পেইড করে রাখা যায়, তাই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আয় করা সম্ভব।
ব্যাপারটি কিভাবে মাথায় এলো, জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ‘একজন ভালো শিক্ষককে দেখা যায় সারা দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাচ পরিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতো এত জ্ঞানী গুণী মানুষ বিভিন্ন লেকচার বা প্র্যাকটিস ম্যাটেরিয়াল তৈরি করবেন ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটাই তো হওয়া উচিত। সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনা নয়, মানুষের এখন অনেক কিছু জানা প্রয়োজন। একই জিনিস বার বার পরিয়ে গলা ব্যথা না করে, বাইরের দেশের মতো, লেকচার অনলাইনভিত্তিক হওয়া উচিত।’ নিজের এই পোর্টালের জন্য তিনি ২০১৬ সালে ওয়াশিংটন এ ইনস্টিটিউট অব পিস এ এম এডুকেশন অ্যাল্যায়েন্সে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এর পর থেকে ব্র্যাক, ইউআইইউ, ড্যাফোডিলসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ক্যারিয়ারবিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। ব্যবসার পাশাপাশি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। ফেসবুকে ‘ক্যারিয়ার ওমেন বাংলাদেশ’ নামে গ্রুপের তিনি প্রতিষ্ঠাতা, সে ক্ষেত্রে মেয়েদের কাজের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা, বিভিন্ন জবের ওপেনিং জানানো হয়।
সরকারি চাকরিজীবী বাবা এবং গৃহিণী মায়ের মধ্যবিত্ত পরিবারে ভালোবাসা, মমতা, আত্মীয়স্বজন মিলে আনন্দ সুখ দুঃখ, ভাগাভাগি, শেয়ারিং দেখে বড় হয়েছেন। ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ তিনি তার স্কুল কলেজের প্রতিষ্ঠান ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এবং কলেজের কাছে। তার এই এগিয়ে চলার পেছনে কৃতজ্ঞতা দিতে, তিনি সবসময় স্বীকার করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইউনিভার্সিটির কমার্স ফ্যাকাল্টি, আইবি ডিপার্টমেন্ট যেসব থেকে তিনি বিবিএ, এমবিএ করছেন। পড়াশোনা যেন পিছু ছাড়ে না বলে পিজিডি প্রোগাম চালিয়ে যাচ্ছেন । মাত্র ২৩ বছর বয়সে, নর্থ সাউথ থেকে বিবিএ শেষ করেই তিনি গ্রামীণফোন থেকে চাকরি জীবন শুরু করেন, তারপর ওয়াই ম্যাক্স কোম্পানি কিউবি, তারপর নিজের প্রতিষ্ঠান ইএটিএল। যেখানে তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, সেসিপ, টিকিউ আইসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং মন্ত্রণালয়ের সাথে বিভাগীয় প্রজেক্টসংক্রান্ত কাজে টিম লিডার ছিলেন।
সাক্ষাৎকার : রুমা ইসলাম