শ্যামনগর প্রতিনিধি: ঈদ উপলক্ষে একদিন আগে অনেক ঘুরে বাজার থেকে নুতন জামা-জুতা কিনেছিল মৌসুমী।
ইচ্ছা ছিল ঈদের দিন নুতন জামা-জুতা পরে পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ উদযাপন করবে। তবে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ু–য়া মৌসুমীর ঈদে নুতন জামা পরার সে স্বপ্ন ও সাধ অধরা রয়ে গেল। মায়ের উপর অভিমানে কীটনাশক পানে জীবন গেল তার। চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণার পর বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তানকে দাফন করেছে। মঙ্গলবার মর্মস্পর্শী এ ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের শংকরকাটি গ্রামে। পাশের শংকরকাটি সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী মৌসুমী একই গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর মিজানুর রহমানের মেয়ে। মৌসুমীর পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায় ঈদের জন্য রীতিমত বায়না ধরে বুধবার পিতার নিকট থেকে ১৩শ টাকা আদায় করে মৌসুমী। সেদিন বিকালে বড় বোনকে সাথে নিয়ে শ্যামনগর বাজারে যেয়ে নিজের পছন্দের জামা-জুতা কিনে আনে তের বছরের এ কিশোরী। তবে বুধবার সকালে নুতন জামা-জুতা মা’কে দেখাতে গেলে বাঁধে বিপত্তি। জামা পছন্দ না হওয়ায় মেয়েকে তিরস্কার করেন তার মা। একপর্যায়ে মায়ের তিরস্কার সইতে না পেরে অভিমানে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে সে। কয়েক মুহুর্ত পরে বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত মৌসুমীকে নিয়ে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পাকস্থলী ওয়াশ করার পর ঘন্টা দুয়েক স্থিতিশীল ছিল তার অবস্থা। একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে পথিমধ্যে পাশে থাকা পিতা ও মায়ের হাতে হাত রেখে শেষ কথা বলেই পরপারে পাড়ি জমায় সে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্মরত ডাঃ ত্রিদেব দেবনাথ বলেন, রোযা রাখার দরুন সে আগে থেকে শাররীকভাবে দুর্বল ছিল। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার ক্ষেত্রেও তার পরিবারের সদস্যরা দেরি করে ফেলে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আনিচুজ্জামান বলেন, তিন ভাই বোনের মধ্যে ছোট ছিল মৌসুমী। তার এমন মৃত্যু গোটা এলাকার মানুষকে কাঁদাচ্ছে। শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃতদেহ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।