অবহেলায় মাঠ কর্মীরা ৩০ বছরেও হয়নি নিয়োগবিধি,বেতন গ্রেড-১৭ নেই পদোন্নতিও

ঢাকা প্রতিনিধিঃ-
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মূল চালিকাশক্তি মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পরিবার কল্যাণ সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকদের আজও হয়নি নিয়োগবিধি। চরম বেতন বৈষম্য, পদোন্নতি সহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সংশ্লিষ্ট দুই কর্মচারী। মাত্র ১৭ গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন পরিবার কল্যান সহকারীগন(Fwa) অন্যদিকে ১৬ গ্রেড বেতন পাচ্ছেন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকগন (Fpi)। একই পদে থেকে তাদের চাকুরীতে জীবনের ইতি টানতে হচ্ছে। প্রায় ৩০ বছরেও হয়নি নিয়োগবিধি। এমনকি একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও বেতন পাচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী অর্থাৎ ১৭ গ্রড। এছাড়া ১৯৯৬ সালে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগবিধি-১৯৯৬ প্রণয়ন করা হয়। ওই নিয়োগবিধিতে অজ্ঞাত কারণে এ দুটি পদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাহলে এ দুটি পদে কিভাবে নিয়োগ দেয়া হয় এ প্রশ্নটি আজও সকলের অজানা। নিয়োগবিধি ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উক্ত দুটি পদে নিয়োগ প্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ ও আইন পরিপন্থী।

মাঠ পর্যায়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগেরবেশ কয়েকজন কর্মচারীরা বলেন, একই মন্ত্রণালয়ের অধীন মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগসহ অন্য সব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকলেও তাদের নিয়োগবিধির ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাল ফিতায় আটকে আছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মতো তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কারণেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু এ কাজের মূল কারিগর এফপিআই ও এফডব্লিউওরা চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। পরিবার কল্যাণ সহকারীদের শূন্যপদে এনজিও কর্মীদের নিয়োগ ও পরিদর্শক পদ বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এতে কর্মচারীদের দাবির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেও তাদের অভিযোগ। বর্তমানে এখন আবার ২০২৪ সালেও নিয়োগ বিধি ছাড়া এ দুটি পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উক্ত অধিদপ্তর এসএসসি পাশে পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং এইচএসসি পাসে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক নিয়োগ প্রদান করেন। এ বিষয়ে কোন মাঠ কর্মচারী জানতে চাইলে বা প্রতিবাদ করলে উক্ত অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারা হতে হয় নানা ধরনের লাঞ্ছনা বাঞ্চনা ও নানা হয়রানির শিকার। এছাড়া নিয়োগবিধির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা বেতন বৈষম্য পদোন্নতি সহ নানা সুযোগ সুবিধা থেকে অদ্য পর্যন্ত বঞ্চিত হয়ে আসছে। এদিকে একজন ১৬ গ্রেডের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক দ্বারা কখনোই মাটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। যার ফলে সরকারের সঠিক আশানুরূপ লক্ষ্য বাস্তবায়ন হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। দেখা যায় একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ব্যাপক বেতন বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবতার জীবন যাপন করছেন যুগের পর যুগ। অন্যদিকে পুলিশ পরিদর্শক ৯ম গ্রেড,বিদ্যালয় পরিদর্শক ১০ গ্রেড, খাদ্য পরিদর্শক ১০ম গ্রেড, বাজার পরিদর্শক ১১ গ্রেড, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১১ গ্রেড, পরিবহন পরিদর্শক ১০ম গ্রেডে বেতন সুবিধাগ গ্রহণ করে থাকেন।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক নিকট জানতে চাইলে,তিনি জানান নিয়োগ বিধি না থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। এ বিষয়টি অধিদপ্তর দেখবে। নিয়োগবিধির বিষয়ে আমরা কাজ করি না। তবে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।

উল্লেখ্য, মাঠ পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা সুখী পরিবার গঠনে ব্যাপক অবদান রেখে আসছে।বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা সেবার পাশাপাশি পুষ্টি সেবা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা, কৈশোর বান্ধব সেবা, গর্ভবতী সেবা, নবজাতক সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, করোনা টিকা কর্মসূচি ও ভিটামিন কর্মসূচিসহ সরকারের প্রত্যেকটি সেবামূলক কার্যক্রমই নিরলস পরিশ্রম করে আসছে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পরিবার কল্যাণ সহকারীগন ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শনগণ। কিন্ত উক্ত অধিদপ্তর থেকে মাঠের কাজের ন্যূনতম মূল্যায়ন পাইনি মাঠ পর্যায়ের কর্মরত কর্মচারীবৃন্দ। মাঠকর্মচারীদের কয়েক যুগের দাবি নিয়োগবিধি এ দুটি পদকে অন্তর্ভুক্তকরণ। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হবে স্নাতক পাস বেতন হবে দশম গ্রেড। পরিবার কল্যাণ সহকারি হবে এইচএসসি পাশ বেতন হবে ১১ গ্রড।

প্রিয় পাঠক পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে আরো নানা অসংগতি নিয়ে থাকছে ২য় পর্বে সাথে থাকুন।