নিজস্ব প্রতিবেদক মির্জা তুষার আহমেদ।
পঞ্চগড়: কাটাতারের বেড়া, সীমান্ত কোনটাই বোঝে না ভালোবাসা! তার প্রমাণ দিলেন ভারতীয় তরুণী রিয়া বালা। স্বামীর খোঁজে প্রথমবার বাংলাদেশে এসে বিফল হলেও দ্বিতীয়বার সফল হয়েছেন এ ভারতীয় তরুণী।
তার ঠাঁই হয়েছে স্বামী বিটু রায়ের ঘরে।
বাংলাদেশি যুবক বিটু রায়ের বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের শিবচন্ডী এলাকায়।সেখানে অখিল চন্দ্র রায়ের ছেলে তিনি।
অন্যদিকে, রিয়া বালা ভারতের বর্ধমান জেলার অম্বিকা কালনা এলাকার বাসিন্দা।তার বাবার নাম শ্যামল কান্তি বালা।
(২০২৪ নতুন বছরে) দ্বিতীয়বারের মতো ভারত থেকে স্বামীর টানে শিবচন্ডী এলাকায় ছুটে আসেন রিয়া।
তাকে মেনে নেন বিটু ও তার পরিবার।
ঘটনাটি জানাজানি হলে পরদিন বৃহস্পতিবার বিটুর বাড়িতে ওই তরুণীকে দেখতে ভিড় জমান স্থানীয়রা। অনেকে এই দম্পত্তিকে আশীর্বাদ করেন।
জানা গেছে, বিটু রায়ের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় রিয়া বালার। পরে তা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। দীর্ঘদিন প্রেমের পর প্রেমিকা রিয়ার সঙ্গে ভারতে দেখা করেন বিটু। একটা সময় বিয়েও করেন তারা। সেখানে তিন মাস সংসারের পর বাংলাদেশে ফেরেন বিটু।
এর মাঝে কোনো এক কারণে দুজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্বামীর খোঁজে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন রিয়া। তিনদিন বাংলাদেশে অবস্থানের পর ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে হতাশ হয়ে নিজ দেশে ফিরে যান এই ভারতীয় তরুণী। চারদিন পরই আবার বাংলাদেশে আসেন রিয়া। এবার স্বামী বিটুকে পেয়ে দারুণ খুশি তিনি।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্কের পর বিটু ভারতে গিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ থানার শিকারপুর এলাকায় রিয়ার সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ভারতে তারা টানা এক মাস সংসার করেন। এর মাঝে দেশে ফিরে এসে বিটু যোগাযোগ বন্ধ করে। এরপর স্বামীর খোঁজে ২৯ নভেম্বর প্রথম বাংলাদেশে এসে তিনদিন ধরে বিটুর বাড়িতে অবস্থান করে হতাশ হয়ে ভারতে চলে যান রিয়া। এর পর ৬ ডিসেম্বর আবারও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেসনে রিয়া বালা এলে প্রশাসনের উপস্থিতিতে তাকে বিটুর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর পর পঞ্চগড় আদালতে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিয়ে এফিডেফিটের মাধ্যমে নতুন করে তাদের বিয়ে হয়।
আরো জানা গেছে, এক বছরের ভিসার মেয়াদ নিয়ে আসা এই নববধূ ইকোমধ্যে নতুন এই সংসার গুছাতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
এ বিষয়ে নববধূ রিয়া বালা প্রতিবেদককে বলেন, স্বামীকে খুঁজে পাওয়ার লড়াইয়ে সফল হয়ে আমি অনেক খুশি। যেটা নিয়ে এতদিনের লড়াই আমার, সেটা পেয়েছি। সৃষ্টিকর্তাকে শুকরিয়া জানাচ্ছি। আমি আবারও বাংলাদেশে আসার পর আজ (বৃহস্পতিবার) তার পরিবার আদালতে আমাকে বউমা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। এখন থেকে এখানে থাকব। তবে যেহেতু ভারতে আমার বাবা-মা রয়েছে, তাই মাঝে মধ্যে আমি সেখানে যাব।
বিটু রায় প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের অনেক দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের কারণে রিয়া দেশে এসেছে। আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি।এ বিষয়ে বিটুর বাবা অখিল চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা তাকে আমাদের বউমা হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমার দুটি মেয়ে রয়েছে। বউমাকে নিয়ে এখন আমার তিনটি মেয়ে। সকলে তাদের জন্য দোয়া করবেন। যেন তারা সুখে থাকতে পারে।
দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সলেমান আলী বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৯ নভেম্বর ওই মেয়ে বাংলাদেশে আমাদের এলাকায় এসে তিনদিন অবস্থান করে। বিষয়টি আমরা জানার পর প্রশাসনকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করি। যেহেতু সে সময় তার প্রেমিক বা স্বামী বিটু বাড়িতে ছিলের না। তাই তখন সমাধান করা সম্ভব হয় নি। এখন আবারো মেয়েটি তার বাড়িতে এলে প্রশাসনের সহায়তায় ছেলের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছি। যেহেতু স্থানীয় ইউনিয়ন প্রশাসনের দায়িত্বে আছি তাই আমি ওই মেয়ের বিষয়টি আমলে নিয়ে খোঁজখবর রাখছি।