বেপরোয়া লুটপাট-চাঁদাবাজি- কালিগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কাজী শরিফুলের বাড়ি থেকে লুটের মোটরসাইকেল উদ্ধার
জিএম মামুন নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কাজী শরিফুল ইসলামের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও লুটপাটে হতবাক হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দলের ওই নেতার নিকট থেকে ব্যবসায়ী তন্ময় মন্ডল লুট হওয়া মোটরসাইকেলটি ফেরত পেলেও এখনও উদ্ধার হয়নি লুটকৃত ৮০ লক্ষাধিক টাকার মালপত্র।
এছাড়াও কাজী শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে আরও কয়েকজনের বাড়ি ও মৎস্যঘেরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে একশ্রেণির অতি উৎসাহী জনতা ভাংচুরসহ নানা প্রকার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এ সুযোগে মহাসমারোহে লুটপাট ও চাঁদাবাজির মিশনে নামেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কুশুলিয়া পুলিন বাবুর মোড় এলাকার কাজী নবীদুল ইসলাম ওরফে নবু কাজীর ছেলে কাজী শরিফুল ইসলাম (৩৫) ও তার কিছু সহযোগী। তারা ৫ আগস্ট রাত ১১ টার দিকে সংঘবদ্ধভাবে কুশুলিয়া গ্রামে অবস্থিত লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামের মৃত বীরিঞ্চি মন্ডলের ছেলে তন্ময় মন্ডল (৪৮) এর মালিকানাধীন ‘সুদিপ্ত এন্টারপ্রাইজ’ নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এ সময় তারা দোকানের সার্টার ভেঙে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার মুরগির ফিড ও ৫ লক্ষ টাকার ঔষধসহ যাবতীয় মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে কাজী শরিফুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী মৌতলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীনাথপুরে অবস্থিত ওই ব্যবসায়ীর আরেকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার ফিড ও বিভিন্ন মালপত্র লুট করে।
এ সময় তন্ময় মন্ডলের একটি বাজাজ ডিসকভার মোটর সাইকেলও লুট করে নিয়ে যায় তারা। লুটকৃত যাবতীয় মালামাল ও মোটর সাইকেল রাখা হয় কুশুলিয়ার পুলিন বাবু হাটখোলা সংলগ্ন কাজী শরিফুলের বাড়িতে। পরবর্তীতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কর্মীরা বিষয়টি জানতে পেরে কাজী শরিফুলের বাড়ি থেকে মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে তন্ময় মন্ডলের ভাই বিকাশ মন্ডল ওরফে বিকাশ সাধুর কাছে ফেরত দেন। তবে অন্যান্য মালপত্র ফেরত পাননি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তন্ময় মন্ডল।
এদিকে সুদীপ্ত এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার দুলাল চক্রবর্তী জানান, ৫ আগস্ট রাত ১১ টার দিকে তাদের দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী বাহিনী। যারা লুটপাটে জড়িত ছিল তাদের চিনতে পারলেও এই মুহূর্তে তাদের নাম বলা সম্ভব নয়। এ পর্যন্ত কোনো মালামাল উদ্ধার না হলেও লুট করে নিয়ে যাওয়া মোটর সাইকেলটি উদ্ধার হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
কুশুলিয়া গ্রামের বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, ৫ আগস্ট থেকে এখনো পর্যন্ত নিরবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে শরিফুল ইসলাম। তার বাড়ি থেকে তন্ময় মন্ডলের মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছিল। কাজী শরিফুল ইসলামের এ ধরণের ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সুনাম নষ্ট করছে বলে জানান ওই বিএনপি নেতা।
উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক রোকনুজ্জামান রোকন এর ছত্রছায়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কাজী শরিফুল ইসলাম অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে। কৃষকদলের আহবায়ক রোকনুজ্জামান রোকনের বিষয়ে তদন্ত করলে তার বিরুদ্ধেও অনেক অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসবে দাবি করে কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, এ ধরণের লুটেরা ও চাঁদাবাজদের কঠোর হস্তে দমন করতে না পারলে দলের উপর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুশুলিয়ার ইউনিয়নের আহ্বায়ক কাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয়। সুদীপ্ত এন্টারপ্রাইজে ৫ আগস্ট লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করলেও তিনি ওই ঘটনার সাথে জড়িত নন এবং তার বাড়ি থেকে মোটর সাইকেল উদ্ধার হয়নি বলে দাবি করেন।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কাজী আবু সাঈদ সোহেল তার সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক কাজী শরিফুল ইসলামের বাড়ি থেকে তন্ময় মন্ডলের মোটর সাইকেল উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর দলের অনেকে না বুঝে কিছু কিছু অপকর্ম করেছে। তবে যারা অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়েছিল এবং এখনো অপকর্ম করছে তাদের অপরাধের প্রমাণ পেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।