আত্রাইয়ে সিংসাড়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ!তবুও চাকুরীতে বহাল

ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট
১৫

নওগাঁ জেলা সংবাদ দাতা,নওগাঁ :নওগাঁর আত্রাই উপজেলা আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত সিংসাড়া কছির উদ্দিন দেওয়ান মেমোরিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ।বিদ্যাপিঠ এক নামে উপজেলায় পরিচিত হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজটি। কলেজটির অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে স্কুল পরিচালনায় অনিয়ম, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, শিক্ষক বেতন বন্ধ, আর্থিক অনিয়মসহ নানা ধরনের অভিযোগে জর্জরিত। অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় উত্থাপিত অভিযোগে বলা হয়েছে,ফরিদুল ইসলাম রতন ১৯৯৫ সালে কলেজ শাখায় কমার্স বিষয়ের হিসাব বিজ্ঞান। প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। কিন্তু তার ওই পদোন্নতিতে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি। বিধি অনুযায়ী পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে তাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

যেহেতু হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো.তহিদুল ইসলাম কাগজে কলমে থাকলে ও তার কোন মূল্য নেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

- Advertisement -

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জানান, অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলাম রতন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সময় শিক্ষক প্রভাষক নিয়োগ দেন।

তারা আরো জানান, তুচ্ছ কারণে তিনি (অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলাম রতন) শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতের হুমকি দেন। শিক্ষককে হুমকি এবং তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। তার এমন অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সময়ে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হন অনেকে। একটু প্রতিবাদ করলে বেতন আটকিয়ে দেন।সহকারী প্রধান শিক্ষক কয়েক মাসের বেতন আটকিয়েছে গত কয়েক বছর হয়ে গেছে। তিনি এখনো শিক্ষা অফিসে গিয়ে কিছু করতে পারেনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা আরও জানান, ফরিদুল ইসলাম রতন অধ্যক্ষ হওয়ার পর তেমন ক্লাস নেননি, দু এক দিন ক্লাসে গেলে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে অশ্লীল ব্যবহার করতো। অথচ নানা অযুহাতে কলেজের বিভিন্ন খাতের টাকা উত্তোলন করেছেন।

কছির উদ্দিন দেওয়ান মেমোরিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিযোগকারী শিক্ষকরা জানান, এসব অনিয়ম বন্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা জেলা শিক্ষা অফিস রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের।তবে গত ১৮/০২/২০২৪ খ্রী:স্মারক নং ১/কল/রাজ-৫২৬(২য়)৯২৪ জেলা প্রশাসক নওগাঁ তদন্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী চেয়ারম্যানের আদেশ ক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো.এনামুল হক আইডি নং০১৫২৫৮ এর স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে সিংসাড়া কছির উদ্দিন দেওয়ান মেমোরিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থিক লেনদেন, শিক্ষকদের প্রতি নিপিড়ন, পাঠদান এবং পরিক্ষা গ্রহনে অনিয়ম,প্রতিষ্ঠানের নৈতিক পরিবেশের চরম অবনতি প্রমাণিত হয়েছে মর্মে চিঠি ইস্যু করা হয়।১২/০৫/২০২৪
লিখিত প্রতিবেদন যৌক্তিক কারণ সম্বলিত ব্যাখ্যা পত্র প্রাপ্তির ১০(দশ)কর্ম দিবসের মধ্যে প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করে।
নানা অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলাম রতন ১০ লাখ টাকায় কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান প্রভাষক পদে চাকুরী দেওয়ার নামে উপজেলা দমদমা গ্রামের এ্যাড.আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে নাজমুল হকের কাছে থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয় ২০১৪ সালে।

এছাড়া অধ্যক্ষ হওয়ার পর হিন্দু ছাত্র ছাত্রী কল্যান ট্রাস্টের টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন।এছাড়া প্রশংসা পত্র তুলতে ২০০/৩০০ টাকা মার্কশীট তুলতে ২০০/৩০০ টাকা, অর্জিত সার্টিফিকেট তুলতে ৫০০ টাকা,ফর্ম ফিলআপ বোর্ড ফির চেয়ে বেশি নেওয়া, ভর্তি ফি বেশি নেওয়া হয়,রেফারেন্স অনুযায়ী উপবৃত্তি দেওয়া, রেজিষ্ট্রেশন ফি বেশি নেওয়া,পরীক্ষার ফি বেশি করে নেওয়া।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে তদন্তকাজ চলমান রয়েছে। নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এটি তদন্ত করে দেখছেন।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক এনামুল হক মুঠোফোনে বলেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখেছেন তারা। তদন্তকাজ শেষ, প্রতিবেদন ও দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী বোর্ডের অধীনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকেও এ বিষয়ে তদন্তকাজ শুরু করা হবে বলে জানা গেছে। কছির উদ্দিন দেওয়ান মেমোরিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি আভিযোগ জমা পড়েছে। জনবল সংকটের কারণে তদন্তকাজে একটু বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগপত্রে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বেশকিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আরো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে দ্রুত আমরা তদন্তকাজ শুরু করব। অভিযোগ প্রমাণিত তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানার জন্য কছির উদ্দিন দেওয়ান মেমোরিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে গেলে অধ্যক্ষ ফরিদুল ইসলাম রতন কলেজে অনুপস্থিত। মোবাইল ফোনেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও সংবাদ