নলতা কলেজের অধ্যক্ষ তোফায়েলের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র ফাঁস-ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"addons":2},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}
ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট
৪৭

জিএম মামুন বিশেষ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ তোফায়েল আহম্মেদের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসছে। বহুল বিতর্কিত এ শিক্ষাদস্যুর অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের এলাকাবাসী। অবিলম্বে তার অপসারণ দাবি করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বিভিন্ন সূত্রে থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এর প্রতিবেশী তোফায়েল আহম্মেদ। প্রভাবশালী এ নেতার পদলেহন ও তোষামোদি করে নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, পরে উপাধ্যক্ষ এবং অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান তিনি। আর ধুরন্ধর তোফায়েল আহম্মেদ অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করতে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে অন্যায়ভাবে কলেজ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন জনপ্রিয় অধ্যক্ষ আবু মুছাকে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকমাস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তিনি উপাধ্যক্ষ হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডামি আবেদনকারীদের সহায়তায় উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করেন। একই দিনে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষা হলেও অংশগ্রহণকারী ১২ প্রার্থীর কাউকেই নিয়োগ দেয়া হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি ডা. রুহুল হক এমপির সাথে যোগসাজশে অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়। উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন তোফায়েল আহম্মেদ। ৬মাসের বেশী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকার নিয়ম না থাকা সত্তে¡ও সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি ৩ বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। এসময় তিনি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি। ৩ বছর পর অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে অধ্যক্ষের চেয়ার পাকাপোক্ত করেন তিনি। অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের উপর মানসিক নির্যাতনের স্টীমরোলার চালানো শুরু করেন। তার যাবতীয় বিতর্কিত কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন অফিস সহকারী ও তোফায়েল আহম্মেদের কথিত বাল্যবন্ধু দুর্নীতিবাজ দীপক কুমার পাল। পরীক্ষার ফরম ফিলাপে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ফরম বিক্রি করে অন্যায়ভাবে টাকা আদায়, টেস্টিমোনিয়াল, মার্কশীট ও সার্টিফিকেট নেয়ার সময় টাকা দিতে বাধ্য করা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ থেকে টাকা আত্মসাৎ সহ অনিয়ম ও দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তোলেন তোফায়েল আহম্মেদ। সম্প্রতি ৪ জন ল্যাব এসিষ্ট্যান্ট ও একজন অফিস সহায়ক নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করেন প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নিজের বাড়ির বাজার করা ও ব্যক্তিগত মোটরবাইক চালক ইরফাত আহছান সেলিমকে নিয়োগ দেন অফিস সহায়ক পদে। আর তিনি প্রকাশ্যে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন পাড়াতুতো মামা নামক খুুঁটির জোরে। একাধিকবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে উৎকোচ দিয়ে হয়েছেন উপজেলার সেরা অধ্যক্ষ। নিজের মেয়েকেও একবার উপজেলার সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচিত করিয়ে নেন তদ্বীরের জোরে। তবে তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ উৎকোচের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তোফায়েল আহম্মেদ যে কয়বার উপজেলার সেরা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন তার একবারও উপজেলার অন্য কোন কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ আবেদন করেননি। অর্থাৎ তোফায়েল আহম্মেদ একাই আবেদনকারী ছিলেন, একাই সেরা অধ্যক্ষ হয়েছেন।

- Advertisement -

এলাকাবাসী জানান, প্রায় ১৯ মাস আগে মামা নামক খুঁটির জোরে তোফায়েল আহম্মেদ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের জাফরপুরে অবস্থিত কাজী আলাউদ্দীন ডিগ্রী কলেজে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনীত হন। গাড়ীবহর নিয়ে তিনি ওই কলেজে ম্যানেজিং কমিটির প্রথম মিটিংয়ে যেয়ে দেখাতে শুরু করেন ক্ষমতার দাপট। একপর্যায়ে গত ২৩ জুন কাজী আলাউদ্দীন কলেজে জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ দেয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন ৩০ লক্ষ টাকা। এ নিয়ে ওই কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও স্থানীয় হতবিহবল হয়ে পড়েন। নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে। তাছাড়া বিগত কয়েকবছর যাবত কাজী আলাউদ্দীন কলেজের শিক্ষকদের সাতে আঁতাত করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নানা অবৈধ পন্থায় রেজাল্ট ভাল করানোর সাথে জড়িত আছেন অধ্যক্ষ তোফায়েল আহম্মেদ। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যোগসাজশের বিষয়টি ব্যাপক ভাবে জানাজানি হওয়ায় বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা আরও বলেন, কথিত মামার আশির্বাদে নলতার ঐতিহ্যবাহী খান বাহাদুর আহছানউল্লা জুনিয়র হাইস্কুলে বিদ্যুৎসাহী সদস্য মনোনীত হন তোফায়েল আহম্মেদ। ওই প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে থাকেন তিনি। এখানেও শুরু হয় অনিময়-দুর্নিিত, স্বজনপ্রীতি ও নানা প্রক্রিয়া অর্থ লুটপাট। ব্যক্তিগত আক্রোশে কিছু শিক্ষকের সাথে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজের স্ত্রী রহিমা সরোয়ারীকে ওই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের পাশাপাশি নলতা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। কয়েক বছর যাবত উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন রহিমা সরোয়ারী। স্ত্রী ও মেয়েকে আনা নেয়া করা এবং বাড়ির হাটবাজার করে দেয়া ইরফাত আহছান সেলিম কেবি আহছানউল্লা জুনিয়র হাইস্কুল থেকেও বেতন নিতেন আবার নলতা কলেজে এমপিওভুক্ত হয়ে সেখান থেকেও বেতন নিতেন। শুধু তাই নয় নয়, তোফায়েল আহম্মেদ পার্শ্ববর্তী নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নলতা বালিকা বিদ্যালয়েও অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ডা. রুহুল হক এর ছত্রছায়ায়। নিয়োগবাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে তোফায়েল আহম্মেদ এখন কোাটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ডা. রুহুল হক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন তোফায়েল আহম্মেদ। তার দ্বারা নির্যাতিতরা অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। যে কারণে ফাঁস হচ্ছে তোফায়েল আহম্মেদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র। তোফায়েল আহম্মেদের পদত্যাগ ও কলেজে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে ১১ আগস্ট রবিবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সাবেক অধ্যক্ষ আবু মুছার সাথে অন্যায় অবিচার, নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষক-কর্মচারিদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অপকর্মের কারণে তোফায়েল আহম্মেদকে অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল।

এই বিভাগের আরও সংবাদ