কুসিক উপ-নির্বাচনে ভোট চেয়ে মেয়র প্রার্থীরা ছুটে চলেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে
হাবিবুর রহনান মুন্না,
জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা।
গণসংযোগ, স্লোগান ও প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে জমে উঠেছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন। ভোট চেয়ে মেয়র প্রার্থীরা ছুটে চলেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। উঠোন বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়। প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীদের সঙ্গে ছুটে চলেছেন কর্মীরা। কেবলমাত্র মেয়র পদে উপনির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের মাঝে দৃশ্যমান আগ্রহ দেখা না গেলেও এবারের ভোটের মাঠে চার মেয়র প্রার্থী। কেননা আওয়ামী লীগ ঘরণার দুই জন ও বিএনপি ঘরণার দুই প্রার্থী হওয়ায় ভোটের মাঠে দেখা দিয়েছে শক্ত লড়াইয়ের আভাস।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রতিটি এলাকায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। বইছে ভোট উৎসবের আমেজ। পোস্টারে-ব্যানারে ছেয়ে গেছে রাস্তাঘাট। দুই লক্ষাধিক ভোটারের মন জয় করতে সিটির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে প্রচারণা চালাচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কাউসার সকালে নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাকতলা, উনাইসার, জাঙ্গালিয়া, ইয়াছিন মার্কেট, নোয়াগাওসহ আশপাশের সকল এলাকায় প্রচারণার এক পর্যায়ে গণমাধ্যমকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বুঝা যাবে ৯ মার্চ বিকেল ৪ টার পরে। এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। কারণ স্থানীয় সংসদ সদস্য ফুল নেই নেয়ার নাম করে তার কন্যা ও বাস প্রতীকের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন। যার প্রমাণ স্থানীয় পত্রিকা গুলো। সুতরাং আমি এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখিনা।তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচন গুলো বিএনপি বর্জন করেছে। তাই ভোটার ছিল না। সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও ৮০ শতাংশ মানুষ বিএনপি গড়নার। তারা আগে নির্বাচনে না গেলেও এবার যাবে। কারণ তারা ঘোড়া প্রতীককে সমর্থন দিয়ে মাঠে আছে। যদি এবার নির্বাচনে পেশীশক্তির প্রয়োগ হয়, নির্বাচনে যদি কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের বাধা দেয়া হয়, যদি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট না আয়োজন করতে পারে তাহলে জনগণের আস্থা হারাবেন।
অপরদিকে নগরীর সকালে ২৭ নং ওয়ার্ডের চৌয়ারা ও ২১ নংওয়ার্ড আশ্রাফপুর, শাকতলা,রামনগর ও জাঙ্গালীয়ায় এবং ২২ নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা করেছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। কেন্দ্রিয় বিএনপির সাবেক নির্বাহী সদস্য প্রচারণা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ভোটারদের একটাই শঙ্কা, তারা নির্বাচনে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন কি-না। আপনারা পর্যাপ্ত পুলিশ দেন, যেন কেন্দ্রগুলোতে ভোটাররা আসতে পারে।
(২৯ ফেব্রয়ারী) বৃহস্পতিবার নগরী ২৫ নং ওয়ার্ডের তারাপাইয়া এলাকায়, ২৬ নং ওয়ার্ডের মহেশপুর এলাকায় ২৭ নং ওয়ার্ডের চৌয়ারাসহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী ও স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা ডা. তাহসিন বাহার সূচনা দিনভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এদেশটা অনেক কষ্টে অর্জিত হয়েছে। ৩০ লাখ শহিদের রক্ত এ মাটিতে ভিজেছে আর দুই লাখ মা-বোনের সম্্রাণ হারিয়েছে। তাই তরুনদের ভোট হউক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে ও দূর্ণীতির বিরুদ্ধে। শিক্ষিত ড্রাইভার ডা. তাহসিন বাহার সূচনা এবার উন্নয়নে বাস নিয়ে এসেছে। উন্নয়নের গাড়িতে দুই প্রজন্ম মুরুব্বী আর তরুণদের নিয়ে একসাথে চলতে পারে। আমি নগরপিতা বা নগর মাতা হয়ে নয়,নগরকন্যা হয়ে এ শহরটার উন্নয়ন করতে চাই। বয়স হয়ে গেলে সন্তান যেমন করে মা-বাবার সেবা যত্ন করে আমিও নগরকন্যা হয়ে এ নগরবাসীর পাশে থেকে উন্নয়ন ও সেবা করতে চাই। একটা পরিকল্পিত সুন্দর স্মার্ট সিটি গড়তে চাই । এবার আমার মুরুব্বি চাচা আর তরুণ ভাইদের সাথে মা-বোনেরা রয়েছে। মুরুব্বিদের অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের শক্তিতে আমি অনেক সাহস পাচ্ছি। আপনাদের এ ভালোবাসার শক্তি কুমিল্লা মানুষের কল্যাণে ব্যায় করব ইনশাআল্লাহ।
অন্য দিকে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি হাতি প্রতীকের প্রার্থী নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম নগরীর সকালে ১৩নং ওয়ার্ডের চর্থা চৌমুহনী থেকে শুরু করে, বড় পুকুর পাড়, থিরা পুকুর পশ্চিম পাড়, হালুয়াপাড়া রোড রিক্সা গ্যারেজ সহ বিভিন্ন জায়গায় হাতি মার্কার সমর্থনে গণসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন উপনির্বাচনকে সুস্ঠ ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন,তিনি আরও বলেন – ১০৫টি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কথা বলেন। জনাব তানিম আরো বলেন ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ও আচরন বিধি বাস্তবায়ন করতে হলে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র ভোটের দিনে পুলিশ প্রশাসন কাজ করলেই হবেনা। ভোটের পরবর্তি দিনগুলোকে শান্তিপূর্ণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সিটির মেয়রপদে উপ নির্বাচনে আগামী ৯ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫ কেন্দ্রে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার।