ফেসবুকে নগ্ন দৃশ্য পোষ্ট করায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা।
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ॥
গোপন ক্যামেরায় ধারনকৃত গোসলের নগ্ন দৃশ্য ফেসবুকে পোষ্ট করার লজ্জা ও অপমানে নিহাত সুলতানা তন্নি (১৪) নামের এক স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। বুধবার রাতে নিজ শোবার ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী গ্রামের শিক্ষক আল মামুনের মেয়ে তন্নি স্থানীয় কাশিমাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেনীর ছাত্রী। ঘটনার পরপরই বুধবার রাতে সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গোসলের দৃশ্য ফেসবুকে পোষ্টের পর পিতাকে হত্যাসহ গোপন ক্যামেরায় ধারনকৃত আরও নগ্ন দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়ায় সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে পরিবারের দাবি। কাশিমাড়ী গ্রামের স্বর্ন ব্যবসায়ী আফছার হোসেনের ছেলে আলআমিন উপজেলার গোবিন্দপুর কলেজিয়েট স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ঘটনার শিকার কিশোরীর পিতা আল মামুন জানান, গত ৯ জুন আলআমিন নামের স্থানীয় এক বখাটে রাস্তার মধ্যে তন্নিকে মারধর করে তার মুটোফোন ছিনিয়ে নেয়। যার প্রেক্ষিতে ১৬ জুন তিনি নিজে বাদি হয়ে মেয়েকে উত্যক্তসহ মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তরুনকে আসামী করে শ্যামনগর থানায় মামলা (যার নং ৩৩) করে।
তিনি আরও জানান, মামলা দায়েরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ আলআমিন গত ৫ জুলাই একাধিক ‘ভূয়া’ ফেসবুক আইডি হতে তন্নির গোসলের পুর্ব মুহুর্তের খোলামেলা দৃশ্য ফেসবুকে পোষ্ট করে। এঘটনার তিনদিন আগে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে গোপন ক্যামেরায় ধারনকৃত তার মেয়ের গোসলের দৃশ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল সে।
তন্নির ভগ্নিপতি আনিছুর রহমান অভিযোগ করেন, আলআমিন কৌশলে গোপন ক্যামেরায় তন্নির গোসল দৃশ্যের ভিডিও ধারন করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। আবার বুধবার বিকালে ঐ বখাটে তরুনের মা বাড়িতে ডাকিয়ে এনে মামলা প্রত্যাহার না হলে গোপন ক্যামেরায় ধারনকৃত আরও অসংখ্য নগ্ন ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়াসহ তার পিতাকে হত্যার হুমকি দেয়। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার রাত আটটার দিকে শোবার ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফুফু শামিমাসহ পরিবারের সদস্যরা ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
অভিযুক্ত আলআমিনের সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা সত্ত্বেও তার মুটোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযুক্ত তরুনের পিতা আফছার হোসেন জানান, মামলা হওয়ায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া আলআমিন পরিবারের কারও সাথে যোগাযোগ করছে না। তিনি আরও জানান, বুধবার বিকালে তন্নি তার বাড়িতে এসে তার স্ত্রীসহ অন্যদের কাছে মাফ চেয়ে যায়। মেয়েটির নগ্ন দৃশ্য তার ছেলে ফেসবুকে দেয়নি- দাবি করে তিনি অনুরোধ করেন বিষয়টি মিটমাটের জন্য মেয়ের পরিবারকে বোঝাতে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ মিলন হোসেন জানান, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী কিশোরী এখন অনেকটা শংকামুক্ত।
ইভটিচিং এর অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অবস্থান ট্রেস করতে না পরায় আসামীকে ধরা যাচ্ছে না। তবে তাকে গ্রেফতারের জন্য সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টা একটি অপরাধ জানিয়ে তিনি বলেন, মেয়েটির নগ্ন ভিডিও ফেসবুকে দেয়ার ঘটনায় তার পরিবার চাইলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করতে পারে। #