স্বাগতম হে নতুন প্রজন্ম!

ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট
২০

এম. এ. আলিম খান:

সময় এবং নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। আপন গতিতে চলে অবিরাম অবিরত। সৃষ্টির আদিকাল থেকে চলে আসছে এবং চলবে অনন্তকাল। এরই ধারাবাহিকতায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় জেন জি শব্দটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ক্ষমতার পট পরিবর্তনে এই জেনারেশন জি ব্যাপক ভুমিকা পালন করেছে। বর্তমানে জেনারেশন জি দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। আমরা অনেকেই জানি না বা আগে জানতাম আসলে এই জেন জি কী এবং কোন সময়ে কোন জেনরেশন শুরু ও শেষ হয়েছে। আসলে জেনারেশন নিয়ে ভাবার সময় বা প্রয়োজন আমাদের এতটা ছিল না। কিন্তু জেনারেশন জি সচেতন মহলকে জেনারেশন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে। একটি জেনারেশন কী করতে পারে বা পারে না তা সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ও সিরিয়ার মানুষের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। সিরিয়ার মানুষকে কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে এবং বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘদিন একদলীয় শাসনের অবসান ঘটাতে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করেছে এই জেনারেশন জি।
নতুন বছরের সাথে শুরু হলো নতুন এক প্রজন্ম । ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০৩৯ এই পনেরো বছর যে সব শিশু জন্ম নিবে তাঁরা জেনারেশন বিটা বা জেন বিটা নামে পরিচিত হবে। জেনারেশন আলফা শব্দের প্রবক্তা গবেষক মার্ক ম্যাকক্রিন্ডল বলেছেন, জেন আলফার চেয়ে জেন বিটা আলাদা হবে। তাঁদের নানা ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর খুব বেশি নির্ভর করবে এই শিশুরা এবং এই প্রজন্মের শিশুরা সবচেয়ে বেশি দিন বাঁচবে। বিটা জেনারেশনের গড় আয়ু হবে সব চেয়ে বেশি । ২০৩৫ সালে বিশ্ব জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ হবে জেন বিটা প্রজন্ম।

- Advertisement -

দ্য ইকোনোমিক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এ নতুন প্রজন্ম আগামী দিনে বিশ্বে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সমাজব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে। সমাজে বদল, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব জনসংখ্যায় পরিবর্তন, দ্রুততর নগরায়নের মতো সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে হবে এই জেনারেশন বিটাকে। এই নতুন প্রজন্মের গোটা জীবনটাই প্রযুক্তি দিয়ে মোড়া হবে। ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি স্তরে ঢুকে পড়বে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। তারাই জীবন পরিচালনা করবে।’

এবার একটু দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন জেনারেশনের সময়কাল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ১৯০১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছে তাঁদেরকে গ্রেটেস্ট জেনারেশন বা মহত্তম প্রজন্ম, ১৯২৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৪৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছে তাঁদেরকে সাইলেন্ট জেনারেশন বা নীরব প্রজন্ম, ১৯৪৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৬৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছে তাঁদেরকে বেবি বুমার্স জেনারেশন, ১৯৬৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৮০ সালের ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছে তাঁদেরকে জেনারেশন এক্স, ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছে তাঁদেরকে জেনারেশন ওয়াই বা মিলেনিয়ালস বা সহস্রাব্দ প্রজন্ম, ১৯৯৬ সালের ১জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছে তাঁদেরকে জেনারেশন জেড বা জেন জি, ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সলের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা জন্ম নিয়েছে তাঁরা জেনারেশন আলফা নামে পরিচিত।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায়,
‌‘এসেছে নতুন শিশু, তারে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।‘

স্বাগতম হে জেনারেশন বিটা!

লেখক: সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর, ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশ(ভাব)

এই বিভাগের আরও সংবাদ