রবিবার ,  ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ||  ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ -  গ্রীষ্মকাল

সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল এখন পৌরসভার ময়লা ফেলার ভাগাড়

প্রকাশিত হয়েছে-

মোঃ তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার প্রাণ হিসেবে চিহ্নিত প্রাণসায়ের খাল এখন পৌরবাসীর ময়লা ও আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালে যত্রতত্র ও ইচ্ছা মতো ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। খালটি এখন প্রাণ হারিয়ে শহরের সবচেয়ে বড় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে মশা উৎপাদনের কারখানায় রুপ নিয়েছে। অথচ ভরা যৌবন নিয়ে এক সময় সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ কেন্দ্র হয়ে প্রবহমান ছিল প্রাণ সায়ের খালটি। ফলে দখল আর দূষণে খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। পচা দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার তাগিদে নাক চেপে কোনরকমে খাল পাড়ের রাস্তা দিয়ে চলাচল মানুষজন। সব কিছু দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার থেকে নারিকেলতলা পর্যন্ত এলাকাজুড়ে প্রাণসায়ের খালের পূর্বপাশের ধার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। থানা মসজিদ এলাকায় খালের পাশে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী কাপড়ের দোকান। এসব অস্থায়ী দোকানের উচ্ছিষ্ট ময়লা ও কাপড়ের টুকরো ফেলা হচ্ছে খালে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে সুলতানপুর বড়বাজার এলাকায়। এখানে পুরো বাজারের ময়লা আবর্জনা ও বাজারে জবাই করা পশুর উচ্ছিষ্টাংশ ফেলা হচ্ছে প্রাণসায়ের খালে। প্রতিদিন এই বাজারে ত্রিশটিরও অধিক ছাগল, ভেড়া ও গরু জবাই করা হয়। এসব পশুর সব উচ্ছিষ্ট ফেলা হয় খালে। বিশেষ করে সুলতানপুর বড়বাজার এলাকা থেকে কেষ্ট ময়রার মোড় হয়ে সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল জলিলের বাড়ি পর্যন্ত পুরো খালের তলদেশ ভরাট হয়ে উঠছে। এসব ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দেখা গেছে পথচারীরা এখন এই দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য নাকে রুমাল চেপে রাস্তা পার হয়। বিশেষ করে পথচারীদের সমস্যায় পড়তে হয় সবচেয়ে বেশি।
পথচারীরা বলেন, প্রতি দিন সকালে খালপাড়ের এ সড়ক দিয়ে কয়েক শ’ মানুষ হাঁটাহাঁটি করে। কিন্তু খালের ময়লা আবর্জনার পচা গন্ধে এই এলাকায় নাক চেপে ধরে হাঁটতে হয়। সাতক্ষীরা শহরের পরিবেশটাই দূষিত করে ফেলছে এই প্রাণসায়ের খাল। অথচ যে খালটির ভূমিকা ছিল শহরের পরিবেশকে আরো সুরক্ষা দেয়া।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮৫০ সালের দিকে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ও শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য খালটি খনন করেন। তীব্র খরগ্রোতা মরিচ্চাপ নদীর সঙ্গে বেতনা নদীর সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার জন্য সাতক্ষীরা শহরের ওপর দিয়ে ১৪ কিলোমিটার এ খাল খনন করে সংযোগ করে দেওয়া হয়। তৎকালীন সময়ে সাতক্ষীরার সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে নদী পথে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এ খালটি। এ খালের মাধ্যমে সহজ হয়ে উঠেছিল জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর নাম অনুসারে খালটির নামকরণ করা হয় প্রাণ সায়ের খাল। খালের আশপাশের বাসিন্দারা ছাড়াও বড় বাজারের ব্যবসায়ীসহ ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ময়লা ও আবর্জনা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। এতে সাতক্ষীরা শহরের পরিবেশ অনেক দূষিত হয়ে পড়ছে। ফলে খালটি এখন ভারসাম্য হারিয়ে জন ভোগান্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শহরের সুলতানপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দারা বলেন-প্রাণ সায়ের খালকে যারা ভাগাড়ে পরিণত করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি বলে মনে করি। এতে শহরবাসী বর্ষাকালে জলাবদ্ধতায় শিকার হওয়ার পাশাপাশি সাতক্ষীরা শহরে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। সচেতন সাতক্ষীরাবাসী অবিলম্বে প্রাণ সায়ের খালটি রক্ষা করতে যথাযথ বাস্তব সম্মত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান বলেন, বেশ কিছু দিন আগে পৌরসভার পক্ষ থেকে খালের শেওলা উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। মানুষ যাতে খালটিতে ময়লা আবর্জনা না ফেলে, সে জন্য বারবার বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করেছি। খুব দ্রæত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, প্রাণসায়ের খালপাড়ের বাসিন্দা ও দোকানদারদের নোটিশ করে নিষেধ করা হবে। তারা না শুনলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকবে না। খাল রক্ষায় দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।