যশোরের চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ হোসেনের বিরুদ্ধে যশোরে ঘুষ নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জেলা পুলিশ।সোমবার (১৭ জুন) প্রথমে তাকে যশোর পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। পরে পুলিশ সুপার রওনক জাহান তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, তার বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর উপজেলার ফুলসারা গ্রামের মাসুম বিল্লাহ অপ্রাপ্তবয়স্ক এক সহপাঠীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মেয়ের বাবা চৌগাছা থানা-পুলিশের সহযোগিতা চান। পরে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ হোসেন ছেলেকে না পেয়ে তার বাবা জাহিদুল ইসলামকে থানায় নিয়ে আসেন। পরে দুদিন ধরে তাকে থানায় আটকে রাখেন। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় পলাতক ছেলে ও মেয়েকে হাজির করে উভয় পরিবার মীমাংসা করে নেয়। কিন্তু আটক জাহিদুল ইসলামকে ছেড়ে দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন এসআই আশরাফ। একপর্যায়ে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। থানার অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র বলছেজাহিদুল কাণ্ডের এক সপ্তাহ পর ১৭ নভেম্বর চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিতর্কিত ওসি পায়েল হোসেন। দুর্নীতির বরপুত্র পায়েলের একান্ত সহযোগী বনে যান এসআই আশরাফসহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য। কাউকে তোয়াক্কা না করে তাদের রাজত্ব কায়েম শুরু হয় বীরদর্পে। থানার প্রাচীরের মধ্যে ওসির বাংলোতে তৈরি হয় টর্চার সেল, রিমান্ড বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি হয়ে ওঠে তাদের রুটিন ওয়ার্ক। যোগদানের মাত্র দেড় মাসের মধ্যে নারী কেলেঙ্কারিসহ বহু বিতর্কের জন্মদেন পায়েল হোসেন। ২৯ ডিসেম্বর তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। ওসি পায়েলকে ক্লোজড করার পর তৎকালীন পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিললে বিভাগীয় মামলাপ্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিললে বিভাগীয় মামলা হবে। সেখানেও সত্যতা মিললে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নুর-ই-আলম সিদ্দিকী। কিন্তু পায়েলের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির কোনো প্রতিবেদন আর আলোর মুখ দেখেনি। হটাৎ করেই ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি পায়েলকে সাময়িক বরখাস্ত করে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি’র কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এ ঘটনার পরের মাসে ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ট্যান্ড রিলিজ করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। জেলা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এখনো ওসি পায়েলকে রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। চৌগাছা থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গেও রয়েছে পায়েলের নিয়মিত যোগাযোগ। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন এসআই আশরাফ হোসেন। বিপথগামী এসব ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বুধবার , ২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল
বিতর্কিত ওসি পায়েলের অন্যতম সহযোগী এসআই আশরাফ বরখাস্ত
প্রকাশিত হয়েছে-