পদ্মায় বালুমহাল ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ প্রশাসনের, এলাকাবাসীর শঙ্কা–উদ্বেগ

ইপেপার / প্রিন্ট ইপেপার / প্রিন্ট

পদ্মা নদীর ভাঙন ঠেকাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বাঁধ নির্মাণ করছে সরকার। অন্যদিকে শরীয়তপুরে ভেদরগঞ্জের কাঁচিকাটা এলাকায় পদ্মা নদীতে বালুমহাল ঘোষণা করে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।প্রশাসনের এমন উদ্যোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নেমেছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। ভাঙন প্রবণ এলাকা হওয়ায় এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হলে ব্যাপক নদী ভাঙনের আশঙ্কা করছেন তারা। হইড্রোগ্রাফি জরিপ ছাড়া বালুমহাল ঘোষণার ব্যাপারে সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।সংস্থাটি বলছে, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করা হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভাঙন দেখা দিতে পারে তীরবর্তী এলাকায়। আর উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান নদী ভাঙনের জন্য অবৈধ বালু উত্তোলনকে দায়ী করে ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, গত বছরের মার্চে কাচিকাটা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর ৭৭নং কাচিকাটা মৌজার ২২ দশমিক ৬৩ একর জমি বালু মহাল ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ইজারা দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য তালিকাভুক্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বালু মহাল। ঘোষণার অনুমতি চেয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এক বছর পর আবার একই এলাকার আরেকটি মৌজায় বালু মহাল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের এই প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে পদ্মার তীরবর্তী এলাকার মানুষ ৩ মে মানববন্ধন ও নদীর তীরে অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

- Advertisement -

শরীয়তপুরের তিনটি উপজেলার মোট ২১টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। প্রতি বছরই নদী ভাঙনের কবলে পরে পদ্মা পাড়ের বিস্তৃর্ণ এলাকা। গত ১০ বছরে নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে এই জনপদের অন্তত ২০ হাজার পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে গত ৫ বছরে শরীয়তপুরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদী ভাঙন প্রবণ এলাকায় জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগে ক্ষুব্ধ পদ্মা পাড়ের মানুষ।

এ বিষয়ে নদী ভাঙনে গৃহহীন হাসান খান বলেন, আমি জন্মাইছি এ নদীর পাড়ে। কিন্তু এখন নিজের ভিটেমাটির কোনো ঠিক নাই। গত বছরই নদী ভাঙনে আমার বসতঘর চলে গেছে। এখন আবার শুনতেছি এখান থেকে বালু তোলা হবে। এখানে বালু তুললে আমরা শেষ হয়ে যাবো। প্রশাসন কি আমাদের আরেকবার গৃহহীন করতে চায়? আমাদের দাবি—এই ইজারা বন্ধ হোক, আমাদের বাঁচতে দিন। এ বিষয়ে মনসুর সরদার বলেন, পদ্মা শুধু নদী না, আমাদের জীবন-জীবিকার উৎস। অথচ হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াই যেভাবে বালু মহাল ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তা ভয়ংকর। পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজেই বলছে ভাঙনের আশঙ্কা আছে, তারপরও কেন এমন সিদ্ধান্ত? আমরা উন্নয়নের বিরুদ্ধে না, কিন্তু তা যেন মানবিক ও পরিবেশ সম্মত হয়। প্রয়োজনে আমরা আরও আন্দোলনে যাবো। এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান বলেন, এলাকাটি ভাঙন প্রবণ। নদীতে বালু জমে চর তৈরি হয়, যা সরাতে গিয়ে কখনো ভাঙন কমে, আবার কখনো বেড়ে যায়। তাই হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়া বালু উত্তোলন করলে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা থাকে। এজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বালু কাটা প্রয়োজন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন জানান, বালুমহাল ঘোষণার জন্য পাউবো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ইতিবাচক প্রতিবেদন পেয়েই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নেওয়া হবে। সম্প্রতি নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, নদী ভাঙনের মূল কারণ নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও অবৈধ বালু উত্তোলন। ড্রেজার চালানোর ফলে পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন বাড়ছে। জেলা প্রশাসনকে ড্রেজার আটক ও মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড নিয়ে অভিযান চালানো হবে।

এই বিভাগের আরও সংবাদ