সোমবার ,  ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ||  ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ -  শরৎকাল

দস্যু আতঙ্ক ও ঋণের চাপ নিয়ে সুন্দরবনে ফিরছে জেলেরা

প্রকাশিত হয়েছে-

আব্দুল আলিম,শ্যামনগরঃ

দীর্ঘ ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ থেকে উন্মুক্ত হলো সুন্দরবন। জেলেরা মাছ ধরতে আর পর্যটকরা ঘুরতে প্রবেশের সুযোগ পেলেন দেশের এই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী বনভূমিতে। তবে দস্যু আতঙ্ক আর ঋণের বোঝা তাদের আনন্দকে ম্লান করছে। গত সপ্তাহেই মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন সুন্দরবনের দাড়গাং খাল এলাকা থেকে অপহৃত সাত জেলে। জলদস্যুদের হাতে বন্দি থাকার পর বিকাশের মাধ্যমে আড়াই লাখ টাকা পরিশোধের বিনিময়ে তারা ছাড়া পান। তারা হলেন–শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের  মীরগাং গ্রামের মো. ইব্রাহিম, পারশেখালির আব্দুল হামিদ, টেংরাখালির সুজিত মুন্ডা, কালিনচির রকিবুল ইসলাম, কেউবাচলির আব্দুস সাত্তারসহ আরও দুজন।
পরিবারগুলোর অভিযোগ, মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করলেও অনুনয়-বিনয়ের পর জলদস্যুরা ৩৫ হাজার টাকায় রাজি হয়। সব মিলিয়ে বিকাশে আড়াই লাখ টাকা পরিশোধের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের মুক্তি দেয় দস্যুরা।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা শেষে বন উন্মুক্ত হলেও জেলেদের মুখে নেই স্বস্তি। ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে তারা এখন মাছ ধরা ও কাঁকড়া আহরণে নামছেন।
বুড়িগোয়ালিনীর ট্রলার মালিক নূর ইসলাম বলেন, তিন মাস ট্রলার পড়ে থাকায় অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামতের জন্য সমিতি থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। এখন পাস ছাড়ার পর যে টাকা আয় করবো, তা দিয়ে আগে ঋণ শোধ করতে হবে। সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।
দাতিনখালির জেলে জাহাঙ্গীর সানা বলেন, সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় গত তিন মাসে সুদে টাকা ধার করে সংসার চালাতে হয়েছে। এখন আয় শুরু হলেও প্রথমে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
জেলেদের আরও অভিযোগ, তিন মাস সাধারণ জেলেদের প্রবেশ বন্ধ থাকলেও অসাধু জেলেরা বিষ দিয়ে মাছ ধরেন, হরিণ শিকার করেন। এসব বনবিভাগ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।
<span;>বন বিভাগের কর্মকর্তারা অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। পশ্চিম বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ফজলুর রহমান বলেন,  প্রজনন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে প্রতিবছর জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। আজ থেকে অনুমতি নিয়ে জেলে ও পর্যটকরা প্রবেশ করতে পারবেন। তাদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে বনবিভাগ প্রস্তুত। দস্যু আতঙ্ক আর ঋণের চাপে জর্জরিত উপকূলের এই মানুষগুলো এখন সুন্দরবনের দিকে তাকিয়ে আছেন তাদের  জীবিকার আশায়।